কারওয়ান বাজার, ঢাকা
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯)-এর হত্যাকাণ্ডের এজাহারনামায় উল্লিখিত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। শনিবার (১২ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় র্যাব মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে বাহিনীর মহাপরিচালক একেএম শহিদুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গত ৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে সোহাগকে মাথায় ইট দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর বড় বোন মঞ্জুয়ারা বেগম কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করলে র্যাব গোয়েন্দা তদন্ত জোরদার করে।
গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া ও তদন্তের অগ্রগতি
গত শুক্রবার (১১ জুলাই) র্যাব রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি আলমগীর (২৮) এবং ৫ নম্বর আসামি মনির ওরফে লম্বা মনির (৩২)-কে আটক করে। তাদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে এ পর্যন্ত মোট পাঁচজন সন্দেহভাজনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। র্যাব ডিজি শহিদুর রহমান উল্লেখ করেন, মূল তদন্ত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অধীনে চললেও র্যাব “ছায়া তদন্ত” (গোপন অনুসন্ধান) চালিয়ে তাদের সহায়তা করছে। তিনি স্পষ্ট করেন, “এই তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। জড়িত অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে আমরা কাজ করছি।”
হত্যার পটভূমি ও সম্ভাব্য কারণ
প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই হত্যাকাণ্ড ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও চাঁদাবাজি সংক্রান্ত ইস্যু থেকে সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে র্যাব ডিজি জোর দিয়ে বলেন, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে তদন্তের বিস্তারিত প্রকাশ করা সম্ভব নয়।” স্থানীয় সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, নিহত সোহাগ এবং গ্রেপ্তারকৃত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির যুব শাখার কর্মী হিসেবে সক্রিয় ছিলেন।
ঘটনার প্রেক্ষাপট ও প্রতিক্রিয়া
সোহাগ হত্যার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের শিক্ষার্থীরা তীব্র প্রতিবাদ জানায়। তারা “পাথর মেরে সোহাগ খুন, বিএনপি জবাব দে” স্লোগান দিয়ে বিএনপির দায়বদ্ধতা দাবি করে। এর প্রেক্ষিতে বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চার কর্মীকে আজীবন বহিষ্কার করে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
র্যাব ডিজি শহিদুর রহমান নিশ্চিত করেছেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে জড়িত চাঁদাবাজি সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক শনাক্ত করতে আমরা কাজ করছি।” পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।