সারায়েভো, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বলকানস শাখা শনিবার (১২ জুলাই) স্থায়ীভাবে সম্প্রচার বন্ধ ঘোষণা করেছে। আর্থিক সঙ্কটকে প্রধান কারণ উল্লেখ করে প্রায় ১৪ বছর ধরে বলকান অঞ্চলে সেবা দেয়া এই চ্যানেলের যাত্রা সমাপ্ত হলো। চ্যানেলটির শেষ সংবাদ অনুষ্ঠানে উপস্থাপিকা দালিজা হাসানবেগোভিচ কণ্ঠে আবেগ ধরে রাখতে না পেরে দর্শকদের উদ্দেশে বললেন, “এটাই ছিল আল জাজিরা বলকানসের শেষ সংবাদ অনুষ্ঠান। চৌদ্দ বছর ধরে আমাদের ওপর আস্থা রাখার জন্য আপনাদের অন্তরের ধন্যবাদ”।
২০১১ সালের নভেম্বরে বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভোতে প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে যাত্রা শুরু করে আল জাজিরা বলকানস। যুগোস্লাভিয়া ভেঙে যাওয়ার পর প্রথম আঞ্চলিক সংবাদ চ্যানেল হিসেবে এটি সার্বো-ক্রোয়েশিয়ান ভাষায় (বসনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া ও মন্টেনিগ্রোর সাধারণ ভাষা) সম্প্রচার করত। শান্তি প্রক্রিয়া, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে চ্যানেলটি বলকান অঞ্চলে সত্যিকারের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিল। প্রায় ২০০ জন সাংবাদিক, প্রযোজক ও টেকনিশিয়ান তাদের কর্মক্ষেত্র হারালেন এই বন্ধের মধ্য দিয়ে।
চ্যানেল বন্ধের ঘোষণায় বলকানজুড়ে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীরা গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন। ক্রোয়েশিয়ার সাংবাদিক সমিতি ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যৌথ বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তকে “গণতন্ত্রের জন্য আঘাত” আখ্যা দিয়ে সতর্ক করেছেন, “যেসব সমাজে গণমাধ্যমের বৈচিত্র্য ইতিমধ্যেই সংকুচিত, সেখানে নির্ভরযোগ্য একটি উৎসের বিলুপ্তি সত্যের মৃত্যুর সমতুল্য”। বসনিয়ান সংগঠন বিএইচ নোভিনারির মতে, “চ্যানেলটির অনুপস্থিতি দর্শকদের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে ভারসাম্যপূর্ণ প্রতিবেদন থেকে বঞ্চিত করবে”।
আল জাজিরা বলকানস কাতারের “সাংস্কৃতিক কূটনীতি” এর একটি স্তম্ভ ছিল। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আল জাজিরা আরব বিশ্বের বাইরে কাতারের প্রভাব বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বলকানস শাখাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এটি ইউরোপের প্রবেশদ্বারে কাতারের অবস্থানকে শক্তিশালী করছিল। এই বন্ধের মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক পর্যায়ে কাতারের মিডিয়া প্রভাব কমার ইঙ্গিত স্পষ্ট।
যদিও চ্যানেল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, তবে সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ আয়োজনে বিপুল বিনিয়োগ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপের কারণে কাতার তার আন্তর্জাতিক প্রকল্পগুলো পুনর্মূল্যায়ন করছে। আল জাজিরার মূল সংস্থা এখনও সক্রিয় থাকলেও এর আঞ্চলিক শাখাগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: এএফপি, স্থানীয় বসনীয় ও ক্রোয়েশিয়ান সংবাদমাধ্যম, সাংবাদিক সংগঠনের বিবৃতি, এবং আল জাজিরা বলকানসের ঐতিহাসিক রেকর্ড।