মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে ছয়টি দেশের অভ্যন্তরে সামরিক অভিযান চালিয়ে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে ইসরায়েল। আল-জাজিরার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ৮ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, কাতার ও ইয়েমেনের ভেতরে একাধিক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০০ জন, আহত হয়েছেন কয়েকশ। বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে কাতারের রাজধানী দোহায় হামাসের একটি অফিসে চালানো বিমান হামলা। গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলাকালে এই হামলায় নিহত হন হামাসের শীর্ষ নেতা খলিল আল-হাইয়ার ছেলে হুমাম আল-হাইয়া, তার তিন দেহরক্ষী এবং এক কাতারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা। হামাসের শীর্ষ নেতৃত্ব অক্ষত থাকলেও এই হামলা কাতারের ভূখণ্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রথম নজির হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গাজা উপত্যকায় চলমান আগ্রাসনের ৭০২তম দিনে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হন ৬৭ জন, যাদের মধ্যে ১৪ জন ছিলেন ত্রাণ সংগ্রহে আসা বেসামরিক মানুষ। পরদিন আরও ৮৩ জন নিহত হন। এই ধারাবাহিক হামলা গাজায় মানবিক সংকটকে আরও গভীর করেছে। লেবাননের বেকা ও হারমেল জেলায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলা চালায়, যেখানে পাঁচজন নিহত হন। ইসরায়েল দাবি করে, হিজবুল্লাহর অস্ত্র গুদাম লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে। যদিও ২০২৪ সালের নভেম্বরে যুদ্ধবিরতি হয়েছিল, তবুও ইসরায়েল নিয়মিত লেবাননের অভ্যন্তরে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। সিরিয়ার হোমস ও লাতাকিয়ায় রাতভর হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলাকে দেশটির সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছে। বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলার মাত্রা বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তিউনিসিয়ার সিদি বো সাইদ বন্দরে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রধান জাহাজ ‘ফ্যামিলি বোট’-এ সন্দেহভাজন ইসরায়েলি ড্রোন হামলা চালানো হয়। জাহাজে আগুন ধরে গেলেও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে গাজামুখী নৌবহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ইয়েমেনের রাজধানী সানা ও আল-জাওফ প্রদেশে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় নিহত হন ৩৫ জন, আহত হন ১৩১ জন। নিহতদের মধ্যে একাধিক সাংবাদিকও রয়েছেন, যা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই ধারাবাহিক হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ বাড়ছে, বিশেষ করে কূটনৈতিক আলোচনার সময় হামলার ঘটনা ইসরায়েলের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করছে আগামী কয়েক দিনের কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়ার ওপর।