রিপোর্ট: শেষ পর্যন্ত শাটডাউন ঠেকানো গেল না যুক্তরাষ্ট্রে। বাজেট বিল নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্বের জেরে সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে এ শাটডাউন কার্যকর হয়, ফলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যয়বিল পাসে সিনেট ব্যর্থ হওয়ায় শুরু হলো এই অচলাবস্থা। শাটডাউনের ফলে অপ্রয়োজনীয় ফেডারেল খাতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলেও, জরুরি পরিষেবা—যেমন সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল—চলমান থাকবে। তবে এসব খাতের কর্মীরা আপাতত বেতন পাচ্ছেন না, ফলে তাদের ভোগান্তি বাড়বে। ১৯৮০ সালের পর এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১৫তম শাটডাউন হলেও এবারের ঘটনা বিশেষভাবে নজর কেড়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বাজেট নিয়ে দীর্ঘ টানাপোড়েনের কারণে। সিনেটে তহবিল বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ৬০টি ভোটের মধ্যে শেষ পর্যন্ত ৫৫-৪৫ ভোটে বিলটি পাস হয়নি। রিপাবলিকানদের প্রস্তাবিত অস্থায়ী বিল ডেমোক্র্যাটরা প্রত্যাখ্যান করেন, অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাবিত বিলও রিপাবলিকানদের সমর্থন পায়নি। মূলত স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাজেট বরাদ্দ নিয়ে দুই দলের অবস্থান ছিল একেবারে বিপরীত। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ফেডারেল কর্মীদের অপসারণের মেয়াদ বাড়ানোর হুমকি দিয়েছেন, যার ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। শাটডাউনের ফলে অনেক সরকারি কর্মচারীকে বেতন ছাড়া ছুটিতে পাঠানো হবে এবং বহু সরকারি সেবা কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে। বিবিসি জানিয়েছে, ২০১৮-১৯ সালের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে সরকার শাটডাউন দেখা গেল। যদিও জরুরি বিভাগ চালু থাকবে, তবে জরুরি নয় এমন বিভাগের কর্মীরা কার্যক্রমের বাইরে থাকবেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজেট নিয়ে দলীয় দ্বন্দ্ব, পারস্পরিক সমঝোতার অভাব এবং রাজনৈতিক অস্থিরতাই এমন অচলাবস্থার মূল কারণ। ২০১৮-১৯ সালের দীর্ঘ ৩৫ দিনের শাটডাউন এখনো অনেকের স্মৃতিতে টাটকা। এবারও কবে নাগাদ এই অচলাবস্থা কাটবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, কংগ্রেস ব্যয়বিল পাস করতে ব্যর্থ হলে বা প্রেসিডেন্ট তাতে স্বাক্ষর না করলে শাটডাউন অনিবার্য হয়ে পড়ে। ফলে বেশিরভাগ ফেডারেল সংস্থা তাদের কার্যক্রম স্থগিত করতে বাধ্য হয়, যা দেশজুড়ে নানা অচলাবস্থা সৃষ্টি করে। জরুরি খাতগুলো চালু থাকলেও, সাধারণ নাগরিক এবং সরকারি কর্মচারীদের জন্য এ সময়টি বেশ অস্বস্তিকর ও অনিশ্চয়তার। এ পরিস্থিতিতে সমঝোতার মাধ্যমে দ্রুত সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। অন্যথায়, শাটডাউনের নেতিবাচক প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রেখে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।