শনিবার বিকেলে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা হলো। জাতীয় পার্টি (জাফর) আনুষ্ঠানিকভাবে ১২ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জোটটির বিলুপ্তি ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টি (জাফর)-এর চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের খিলগাঁও কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাহী কমিটির এক জরুরি সভায়। এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের জোটভুক্ত রাজনৈতিক সম্পর্কের ইতি টানা হলো।
সভায় উপস্থিত ছিলেন দলের শীর্ষ নেতারা, যাদের মধ্যে ছিলেন মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, প্রেসিডিয়াম সদস্য নোয়াব আলী আব্বাস খান, অ্যাডভোকেট হোসনে আরা আহসান, আলহাজ সেলিম মাস্টার, ব্যারিস্টার মোস্তফা হায়দার জুবায়ের, এড. মাওলানা রুহুল আমিন, এড. শফিউদ্দিন ভূঁইয়া, ভাইস চেয়ারম্যান শরীফ মিয়া, যুগ্ম মহাসচিব এ এস এম শামীম, কাজী মো. নজরুল, সাংগঠনিক সম্পাদক মহসিন মিয়া, যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, প্রচার সম্পাদক লোকমান পাটোয়ারী, দপ্তর সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, ছাত্রসমাজের সভাপতি কাজী ফয়েজ আহমেদ, যুবসংহতির আহ্বায়ক রইস উদ্দিন, সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন সরকার প্রমুখ।
জাতীয় পার্টি (জাফর)-এর মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন জানান, দীর্ঘদিন ধরে ১২ দলীয় জোটের কিছু নেতার কার্যকলাপ নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। এই ক্ষোভের প্রেক্ষিতেই জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা এখন থেকে মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে এককভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাবো। তবে, বিএনপির নেতৃত্বে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইকে বেগবান করার জন্য আমরা রাজপথে লড়াই অব্যাহত রাখব।”
এই সিদ্ধান্তের ফলে ১২ দলীয় জোটের আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি ঘটল। জোটটি গঠিত হয়েছিল বিএনপির নেতৃত্বে বিভিন্ন দলকে একত্রিত করার লক্ষ্যে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় জোটের ভেতরে বিভক্তি ও মতবিরোধ তীব্র হয়ে উঠেছিল। জাতীয় পার্টি (জাফর)-এর এই সিদ্ধান্ত সেই বিভক্তিরই চূড়ান্ত প্রকাশ।
তবে, জোট থেকে বেরিয়ে গেলেও জাতীয় পার্টি (জাফর) বিএনপির নেতৃত্বে চলমান আন্দোলন-সংগ্রামে অংশীদার হিসেবে থেকে যাবে বলে সভায় ঐকমত্য পোষণ করা হয়েছে। দলটি বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজপথে লড়াই চালিয়ে যাবে।
এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। জাতীয় পার্টি (জাফর)-এর এই পদক্ষেপ কি বিএনপির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, নাকি এটি জোট রাজনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে? এই প্রশ্নের উত্তর এখন সময়ই দেবে।
একদিকে, জাতীয় পার্টি (জাফর)-এর এই সিদ্ধান্ত তাদের স্বাধীন রাজনৈতিক পরিচয়কে আরও সুদৃঢ় করল। অন্যদিকে, এটি ১২ দলীয় জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। জোটের অন্যান্য দলগুলোর প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা এখন দেখার বিষয়।
এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টি (জাফর) তাদের রাজনৈতিক কৌশল ও লক্ষ্যকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করল। তারা এখন থেকে এককভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাবে, কিন্তু বিএনপির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে এখনও কিছু অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
এই ঘটনাটি রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জাতীয় পার্টি (জাফর)-এর এই সিদ্ধান্ত কি তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করবে, নাকি এটি নতুন সংকটের সূচনা করবে? এই প্রশ্নের উত্তর এখন সময়ই দেবে। তবে, একথা নিশ্চিত যে, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করেছে।