ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বর্তমানে যুক্তরাজ্যে সরকারি সফরে রয়েছেন। এই সফরের অংশ হিসেবে তিনি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। বৈঠকে, তারা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নানা দিক এবং আন্তর্জাতিক নানা সংকটের বিষয়ে গভীর আলোচনা করেছেন। এর মধ্যে বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ এবং ইউক্রেনের পরিস্থিতি, পাশাপাশি বর্তমান ভূরাজনৈতিক ইস্যুগুলোর ওপরও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু এই বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
উল্লেখযোগ্য, বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে গত বছরের আগস্টে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে তিনি ভারতে নির্বাসিত অবস্থায় আছেন। হাসিনার ভারত পালানোর পর, যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে নানা গুঞ্জন ওঠে, তবে যুক্তরাজ্য তাকে আশ্রয় দেয়নি। ইউরোপের এই দেশটি জানিয়েছিল, তার দেশে এমন পরিস্থিতিতে আশ্রয় দেওয়ার কোনও আইনি ব্যবস্থা নেই।
হাসিনার পদচ্যুতি ও দেশ ছাড়ার পর, তার পরিবারের সদস্যসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, এবং বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নানা অনুসন্ধান শুরু করেছে। ব্রিটেনের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি হাসিনার ভাগ্নী, তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
বৈঠকের প্রসঙ্গে, এস জয়শঙ্কর এবং ডেভিড ল্যামি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং বর্তমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। জয়শঙ্কর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ এই আলোচনা সম্পর্কে জানান। দুই মন্ত্রী ইউক্রেন, বাংলাদেশ, পশ্চিম এশিয়া, এবং কমনওয়েলথ বিষয়ে মতবিনিময় করেছেন, তবে বাংলাদেশ বিষয়ে তারা কোন নির্দিষ্ট আলোচনা করেছেন, সে বিষয়ে জয়শঙ্কর বিস্তারিত কিছু বলেননি।
একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জয়শঙ্কর বলেন, “আমরা ইউক্রেন, পশ্চিম এশিয়া, বাংলাদেশ, কমনওয়েলথসহ নানা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি। অস্থির বিশ্বে ভারত-যুক্তরাজ্য মিত্রতা স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির পথে অবদান রাখছে।”
এদিকে, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন তদন্তে নাম আসার পর, ব্রিটেনের এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে জানুয়ারিতে দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। তিনি আগে ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে কাজ করতেন, এবং তার দায়িত্ব ছিল যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারে দুর্নীতির মোকাবিলা করা। তবে, তার বিরুদ্ধে আরও আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগ ওঠেছে, যেমন লন্ডনে হাসিনার ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে উপহার নেওয়া এবং সাবেক এক বাংলাদেশি এমপির কাছ থেকে ২০১৯ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের দুটি টিকিট গ্রহণ করা। এই বিতর্কের মাঝে, ব্রিটেনের বিরোধী দল কনজারভেটিভ পার্টি টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়েছিল।
এই ঘটনাগুলোর মধ্যে, জয়শঙ্কর এবং ল্যামির বৈঠক আন্তর্জাতিক কূটনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে, যেখানে একদিকে দুই দেশের সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা চলছে, অন্যদিকে এই অঞ্চলের চলমান সংকটগুলোও গুরুত্ব সহকারে মোকাবিলা করা হচ্ছে।