অবশেষে বুয়েনস আয়ার্সে শুরু হয়েছে ফুটবল কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনার চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে বহুল প্রতীক্ষিত বিচার কার্যক্রম। প্রসিকিউটররা দাবি করেছেন, ম্যারাডোনার মৃত্যু যে এড়ানো সম্ভব ছিল, তার জন্য চিকিৎসকদের অবহেলা দায়ী। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর, ৬০ বছর বয়সে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে নিজের বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এর আগে, মাসের শুরুতে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে তার অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল এবং তিনি সুস্থ হতে শুরু করেছিলেন।
প্রসিকিউটররা জানাচ্ছেন, তার শারীরিক অবস্থার গুরুতরতা জানার পরেও চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের যুক্তি, ম্যারাডোনা অতিরিক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন এবং অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘ সময় হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন ছিল না।
যদি অপরাধ প্রমাণিত হয়, তবে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের আট থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। প্রসিকিউটর প্যাট্রিসিও ফেরারি আদালতে বলেন, “আজ ডিয়েগো ম্যারাডোনা, তার পরিবার এবং আর্জেন্টিনার জনগণ ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারী।”
তদন্তকারীরা এটিকে ‘অনিচ্ছাকৃত হত্যার’ ঘটনা হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, অভিযুক্তরা জানতেন যে ম্যারাডোনার অবস্থা কতটা সংকটজনক, তবুও তাকে বাঁচানোর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি।
বিচারের আওতায় আনা চিকিৎসক ও মেডিকেল কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন এক নিউরোসার্জন, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোবিজ্ঞানী, মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর, নার্সিং কো-অর্ডিনেটর, চিকিৎসক এবং এক নাইট নার্স। এক নাইট নার্স স্বীকার করেছেন যে তিনি সতর্কতার লক্ষণ দেখেছিলেন, তবে তাকে ম্যারাডোনাকে না জাগানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
এই বিচার প্রক্রিয়ায় ১০০ জনেরও বেশি সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেবেন। ধারণা করা হচ্ছে, বিচারকার্য জুলাই মাস পর্যন্ত চলতে পারে।
ডিয়েগো ম্যারাডোনা, যিনি সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে পরিচিত, ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ‘হ্যান্ড অব গড’ গোল করে আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয়ার্ধে তিনি কোকেন আসক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেন এবং ১৯৯১ সালে ড্রাগ পরীক্ষায় পজিটিভ আসায় ১৫ মাস নিষিদ্ধ হন।
তার মৃত্যু বিশ্ব ফুটবলকে গভীর শোকে ডুবিয়ে দেয়। বুয়েনস আয়ার্সের রাষ্ট্রপতি প্রাসাদে হাজার হাজার মানুষ তার কফিনের সামনে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় জমায়।