ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো যাকাত, যা আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরের মধ্যে আল্লাহর ন্যায় বিচার এবং সহানুভূতির প্রকাশ। বিত্তশালীদের জন্য আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন, তাদের ধন-সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ দান করে সমাজের অসহায় ও অভাবগ্রস্ত মানুষদের সহায়তা করার জন্য। যাকাতের আসল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র দান করা নয়, বরং সমাজের দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা, দারিদ্র্য দূরীকরণ, এবং মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটানো।
যাকাত কী? এক কথায়, এটি ধন-সম্পদ, জমির ফসল বা খনিজ সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ, যেটি ইসলামি শরিয়ত দ্বারা নির্ধারিত খাতে ব্যয় করা হয়। পারিভাষিকভাবে, যাকাতের অর্থ হলো, সম্পদকর্তৃক নিসাবের পরিমাণের ওপরে নির্দিষ্ট হক প্রতিষ্ঠিত করে, সমাজের নানান স্তরের অসহায়দের মধ্যে বিতরণ করা। এটি একদিকে যেমন মানুষের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে, অন্যদিকে সমাজে একধরনের সমতা এবং সাম্য প্রতিষ্ঠা করে।
আল্লাহ তায়ালা যাকাত ব্যয়ের জন্য বেশ কিছু খাত নির্ধারণ করেছেন, যা খুবই সুস্পষ্ট এবং প্রযোজ্য। সমাজের দুর্দশাগ্রস্তদের সহায়তা করার জন্য যাকাতের এই খাতগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাকাতের মোট আটটি ব্যয়ের খাত রয়েছে, যা একে অপরের সাথে মিল রেখে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।
প্রথম খাত হলো গরিব ও ফকির, যারা একেবারেই নিঃস্ব এবং যাদের নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই। দ্বিতীয় খাত হলো মিসকিন, যারা কোনো ধরনের সম্পদ বা সচ্ছলতা ভোগ করেন না। তৃতীয়, ইসলামি রাষ্ট্রের সরকারকর্তৃক যাকাত, সদকা ও ওশর সংগ্রহকারীরা, যারা সমাজের জন্য এই সম্পদ সংগ্রহ করে থাকেন। চতুর্থ, ইসলামি দিকে ধাবিত হওয়ার উদ্দেশ্যে যাকাত দেওয়া, যদিও বর্তমান যুগে এটি আর প্রযোজ্য নয়। পঞ্চম, নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ অর্জনের জন্য স্বাধীনতা চুক্তিতে আবদ্ধ দাস-দাসী। ষষ্ঠ, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, যাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা নেই। সপ্তম, যোদ্ধারা, যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র বা অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন না, কিংবা যারা হজের জন্য অর্থের অভাবে অক্ষম। এছাড়া, যারা দ্বীনি শিক্ষায় আগ্রহী এবং ইলম অর্জন করতে চান, অথচ আর্থিক সংকটে পড়েছেন। আটম, সফররত, যাদের প্রয়োজনীয় সম্পদ নেই এবং তাই অভাবগ্রস্ত।
যাকাত প্রদান করার সময়, দাতার কাছে বিষয়টি জানানো কিংবা প্রকাশ করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। দানের উদ্দেশ্য এবং নিয়তই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে, দাতা যদি নিজের নিয়ত ঠিক রাখেন, তবে যাকাতের সঠিক হকদারদের কাছে তা পৌঁছে যায়, আর আল্লাহ তা’আলা তার এই দান কবুল করেন। (আল বাহরুর রায়েক ২/২১২; আদ্দুররুল মুখতার ২/২৬৮)
এই সব খাতগুলির মাধ্যমে যাকাতের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তা প্রদান নয়, বরং একটি সমাজে একত্রিত হয়ে সবার কল্যাণ সাধন করা এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা।