রাত পোহালেই ঈদ—একটি বিশেষ দিন, যা আনন্দ, উল্লাস এবং ধর্মীয় আবেগে ভরপুর। এই উৎসবের দিনটিকে আরও রঙিন ও সুরভিত করে তুলতে, শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় যোগ হয়েছে আতর, টুপি এবং জায়নামাজ। সন্ধ্যার পর থেকে দোকানে দোকানে ভিড় বেড়ে গেছে, বিক্রেতাদের মুখে হাসির ঝিলিক। তবে, এবারের আতরের বাজারেও দেখা দিয়েছে বাড়তি দাম নেওয়ার হিড়িক। দোকানিরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন সুগন্ধির দাম অন্তত দেড়গুণ বেড়ে গেছে, কিন্তু বিক্রিও বেড়েছে।
লালবাগ থেকে হোসেন আলী তাঁর ছেলে রেজোয়ান আহমেদকে নিয়ে টুপি ও আতর কিনতে মার্কেটে এসেছেন। রেজোয়ান বলেন, “ঘরের সবার জন্য জামা-কাপড়সহ অন্যান্য সব কেনাকাটা শেষ। তবে ঈদের জন্য নতুন করে টুপি এবং আতর কেনা বাকি ছিল। বাবার পছন্দ কড়া সুবাসের আতর, আর আমি নেব হালকা সুবাসের। এরপর পছন্দমতো টুপি আর জায়নামাজ কিনব।”
অন্যদিকে, সায়মন ইসলাম নামের এক ক্রেতা জানান, “রমজানের মধ্যে অনেকবার আতর নিয়েছি। এখন এসেছি পরিবারের সবার জন্য আতর কিনতে। দাম তুলনামূলক একটু বেশি হওয়ায় চাইলেও সব কালেকশন নিতে পারি না।”
ফাহমিদ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, “বাবার জন্য জায়নামাজ কিনতে এসেছি। ঈদের দিন আমাদের দুই-তিন প্রজন্মের মিলন হয়। বাবা, আমি, আমার ছেলে—সবাই একত্রে ঈদগাহে যাই। নতুন কাপড়ের পাশাপাশি জায়নামাজ আর আতর নিয়ে যাই। বছরের এই একটা দিনকে বিশেষ করতে আমাদের চেষ্টার ত্রুটি থাকে না।”
বায়তুল মোকারমের আল হারমাইনের সহকারী ম্যানেজার রাকিব হোসাইন জানান, “বরাবরের মতো এবারো আল হারামাইন পারফিউমস ব্যতিক্রমী কিছু করছে। ০% ইএমআই এবারের ঈদের সেরা আকর্ষণ। আমাদের কাছে সুইট, ফ্লোরাল, ফ্রুটি এবং উড বেজড পারফিউম রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “অতিসম্প্রতি বাংলাদেশে আসা পারফিউমগুলো আমাদের কালেকশনে রয়েছে, এর মধ্যে ফ্লোরাল ফেয়ার, লাভেঞ্চার সিরিজ, ব্ল্যাক উড এবং ফারাসা অতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা আশা করছি এবারের ঈদে আল হারমাইনের প্রত্যাশিত বিক্রির মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।”
আহসান আতর হাউজের আব্দুর গফুর বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, বিক্রি অনেক ভালো হয়েছে। এখন একটু মানুষ কম। তবে চাঁদ রাতে বিক্রি বাড়তে পারে। পুরান ঢাকার অনেকেই চাঁদ রাতে আতর, টুপি, জায়নামাজ কিনতে আসেন। সবমিলিয়ে এবারের বিক্রি ভালো।”
রমজানের শুরু থেকেই আতর ও টুপির সঙ্গে তসবি কেনার ধুম পড়েছে। অন্য সময় টুকটাক বিক্রি হলেও রমজানে তসবির দোকানে ভিড় বাড়ে। বাজারে নানা পদের তসবি রয়েছে—কাঠের, পাথরের এবং ক্রিস্টালের তৈরি। দাম ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। ইউজার পাথরের তৈরি তসবির দাম ৬ হাজার টাকা। ক্রিস্টাল ১০০ থেকে ২০০ টাকা, চন্দন দেড় হাজার, জয়তুন ১২০০, টাইগর তসবিহ দুই হাজার, কাঠের তৈরি তসবিহ ৫০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা।
এছাড়া, চীনা টুপি ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, পাকিস্তানি টুপি ১৫০ থেকে ৬৫০ টাকা, ভারতীয় টুপি ৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চীনের ওয়ানি ৬৫০ টাকায়, ভারতের গুজরাটি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, সিডনি ৪০০ টাকা, পাঠান ৪৫০ টাকা এবং ছোট পুতির সঙ্গে সোনালি কাজ করা প্রতিটি টুপি ৪০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। নেটের তৈরি চীনা টুপি ১৫০ টাকা ও তুর্কির টুপি ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বৈচিত্র্যময় নকশা ও ম্যাটেরিয়ালের জায়নাম