ঈদুল ফিতরের উৎসবের প্রাক্কালে, যখন আনন্দের আবহাওয়া চারপাশে ছড়িয়ে পড়ার কথা, তখনই শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা সত্ত্বেও বাস্তবতা ভিন্ন। গতকাল শনিবার পর্যন্ত, রাজধানীর বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেতন ও বোনাসের অভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন। বিজয়নগরের শ্রমভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা তাদের পাওনার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন।
টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, যদি তাদের পূর্ণাঙ্গ বকেয়া বেতন-বোনাস পরিশোধ না করা হয়, তবে তারা শ্রম ভবনের সামনেই ঈদ পালন করবেন—এটি তাদের দৃঢ় সংকল্প। অন্যদিকে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, আপাতত ৩ কোটি টাকার ব্যবস্থা করা হবে। তবে, বাকি টাকা ঈদের পর বৈঠক করে মে দিবসের আগেই সমাধান করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। কিন্তু শ্রমিক নেতারা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন।
গতকাল শনিবার, বকেয়া বেতনের দাবিতে চলমান অবস্থান কর্মসূচির মধ্যে শ্রম সচিবের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিজয়নগরের শ্রম ভবনে দুপুর আড়াইটায় শুরু হওয়া বৈঠক চলে বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত। বৈঠকে অ্যাপারেলস প্লাস ইকো লিমিটেডের শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম, রেখা আক্তার তিন্নি ও সত্যজিত বিশ্বাসসহ ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।
বৈঠক শেষে শ্রম সচিব জানান, আপাতত ২ কোটি টাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আগামী ৮ এপ্রিল শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আবারও বৈঠক হবে। মে দিবসের আগেই পুরোপুরি সমাধান করা হবে। তবে, টিএনজেড গ্রুপের পরিচালক শাহীনসহ তিন কর্মকর্তা শ্রম অধিদপ্তরের হেফাজতে থাকবেন। শ্রম সচিবের বক্তব্যে শ্রমিকরা ২ কোটি টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানান। শহিদুল ইসলাম বলেন, “ঈদের আগেই সব টাকা পরিশোধ করতে হবে। আমাদের ১৭ কোটি টাকা পাওনার বিপরীতে ২ কোটি টাকা নিলে জনপ্রতি ৬ হাজার টাকা করে পাব।”
এ সময় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা শ্রম সচিবের গাড়ির সামনে বসে পড়েন। শ্রম সচিব পরে জানান, ঈদের আগে শ্রমিকদের ৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু শ্রমিকরা দাবি করেন, অন্তত এক মাসের পূর্ণাঙ্গ বেতন ও বোনাস দিতে হবে।
বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে গত ২৩ মার্চ থেকে শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন টিএনজেড গ্রুপের তিনটি কারখানার প্রায় তিন হাজার শ্রমিক। এদের মধ্যে কেউ তিন মাস, কেউ চার মাসের বেতন ও ঈদের বোনাস বাকি রয়েছে।
এদিকে, ৩ কোটি টাকা পরিশোধের প্রস্তাবের বিপরীতে শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, ঈদের আগে পূর্ণাঙ্গ বকেয়া বেতন পরিশোধ না হলে তারা অবস্থান চালিয়ে যাবেন। শ্রম সচিব চলে যাওয়ার পর শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। শহিদুল ইসলাম বলেন, “ঈদের আগেই সব টাকা পরিশোধ করতে হবে। কারণ আমাদের ১৭ কোটি টাকা পাওনার বিপরীতে তিন কোটি টাকা নিলেও শ্রমিকদের কোনো কাজে আসবে না। তিন মাস বেতন না পাওয়ায় অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।”
শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে শুক্রবারও দুই ধরনের পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। শিল্প পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার বেলা ৩টা পর্যন্ত তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ২ হাজার ৮৮৬ কারখানার মধ্যে ১০ শতাংশ ঈদের বোনাস ও ৫৯ শতাংশ মার্চ মাসের অর্ধেক বেতন দেয়নি। তবে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দাবি, তাদের সচল ৯৭ শতাংশ কারখানা বোনাস ও ৯৩ শতাংশ বেতন দিয়েছে।
তবে, তৈরি পোশাকের বাইরে অন্যান্য শিল্প কারখানাতেও শ্রমিকদের বেতন-বোনাস বাকি রয়েছে। সাভার-আশুলিয়া, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেটের বিভিন্ন খাতের ৬ হাজার ৮০৫ কারখানা তদারকি