আল্লাহ তায়ালা কুরআন কারীমে বলেছেন, যারা জমিনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে, মানুষকে সৎকাজের আদেশ করবে, অসৎকাজে বাধা দেবে এবং নামাজ রোজা জাকাত ইত্যাদি দ্বীনের মৌলিক বিষয়াদিসহ আল্লাহ তায়ালার যাবতীয় বিধিবিধান বাস্তবায়ন করবে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সাহায্য করবেন এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবেন।
অপরদিকে যারা জমিনে অশান্তি বিস্তার করবে, অনাচার ও পাপাচার ছড়িয়ে বেড়াবে, জোর-জুলুম ও সীমালঙ্ঘন করবে, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে একসময় ধ্বংস করে দেবেন। কারণ যাদের চারিত্রিক অবক্ষয় ও মানবিক বিপর্যয় ঘটে, এর ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তায়ালা অনিবার্যভাবে তাদের জাগতিক মান-মর্যাদাও কেড়ে নেন।
এ দুই শ্রেণির মধ্যে যারা আল্লাহ তাআলার প্রতি অনুগত, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন- তারা এমন যে, আমি যদি দুনিয়ায় তাদেরকে ক্ষমতা দান করি, তবে তারা নামাজ কায়েম করবে, জাকাত আদায় করবে, সৎকাজের আদেশ করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে। সব কাজের পরিণতি আল্লাহরই হাতে। -সূরা হজ্ব (২২) : ৪১
আল্লাহ তায়ালার প্রতি যারা আনুগত্যশীল, তারা যখন ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবে, তখন তাদের করণীয় কী? কিছুটা সংক্ষেপে উপরিউক্ত আয়াতে তা বর্ণিত হয়েছে। যদিও আয়াতটি কুফরের বিরুদ্ধে জিহাদের ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছে, কিন্তু আয়াতের মর্ম অনেক ব্যাপক।
এর পূর্বের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, যারা আল্লাহকে সাহায্য করবে, আল্লাহ্ও তাদেরকে সাহায্য করবেন। কুরআন কারীমের ভাষায় আল্লাহকে সাহায্য করার অর্থ, তার বান্দাদেরকে সাহায্য করা এবং তার দ্বীনকে জমিনে প্রতিষ্ঠা করা। যারা আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করবে, তারা আল্লাহর অনুগত বান্দা।
আল্লাহ তার এই অনুগত বান্দাদের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাদেরকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তারা সর্বক্ষেত্রে অভাবনীয় উপায়ে সাহায্য পেতে থাকবে।
ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে তাদের কর্তব্য- নামাজ রোজা জাকাত ইত্যাদি দ্বীনের মৌলিক বিধানাবলি পালনকে সমাজের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা করা। সৎকাজের আদেশ করা ও অন্যায় কাজে বাধা দেওয়া। নিজেরাও ফেতনা-ফাসাদ না করা, অন্যদেরকেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে ও ছড়াতে না দেওয়া। এভাবে মুসলিম সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে, গড়ে উঠবে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দের বন্ধন।
সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ- মানুষের প্রতি আল্লাহ তায়ালার অর্পিত গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব। এই উম্মতের এক শ্রেণির মানুষ তা নিষ্ঠার সাথে সর্বদা পালন করে বিধায় এ উম্মত এই দিক থেকেও অপরাপর উম্মত থেকে শ্রেষ্ঠ।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন কারীমে ইরশাদ করেন- (হে মুসলিমগণ!) তোমরা সেই শ্রেষ্ঠতম দল, মানুষের কল্যাণের জন্য যাদের অস্তিত্ব দান করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের আদেশ করে থাক ও অন্যায় কাজে বাধা দিয়ে থাক এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখ। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১১০
কাজেই সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা ছেড়ে দিলে আল্লাহ প্রদত্ত একটি গুরুদায়িত্বে চরম অবহেলা প্রদর্শন করা হবে এবং এ উম্মত অন্যান্য সম্প্রদায় অপেক্ষা তাদের শ্রেষ্ঠত্বের একটি দিক হারাবে।
কাজেই সরকারের কর্তব্য, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ-এর দায়িত্ব রাষ্ট্রীয়ভাবে তদারকি করা। সরকারের একটি বিভাগ বা মন্ত্রণালয় থাকবে, যারা সমাজের সর্বস্তরে আমর বিল মারূফ ও নাহি আনিল মুনকার (সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ)-এর কাজ পরিচালনা করবে।
আর এ কথা তো বলা বাহুল্য, সৎ ও অসৎ কাজের মানদণ্ডের একমাত্র নির্ধারক আল্লাহ তাআলা। তার নীতি-নির্ধারণ অনুযায়ীই ন্যায় ও অন্যায় কাজের বিচার-বিবেচনা হবে।