চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দরে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিশাল বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তিনটি বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান। প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল ও লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণ ও পরিচালনায় এই বিনিয়োগ করা হবে। সূত্র জানিয়েছে, বে-টার্মিনালে পিএসএ সিঙ্গাপুর এবং দুবাইভিত্তিক ডিপি ওয়ার্ল্ড প্রতিষ্ঠান দুটি প্রত্যেকে এক বিলিয়ন করে মোট দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এছাড়া, নেদারল্যান্ডসের এপিএম টার্মিনালস লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। চলতি বছরেই এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানিয়েছেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা ১.২৯ মিলিয়ন টিইইউএস। নতুন টার্মিনালগুলো চালু হলে এই সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৭.৮ মিলিয়ন টিইইউএস-এ। তিনি আরও জানান, আগামী চুক্তিগুলোতে জাতীয় স্বার্থ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। উল্লেখযোগ্য যে, ইতোমধ্যে বন্দরের নতুন নির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব সৌদি আরবভিত্তিক রেড সি গেটওয়েকে দেওয়া হয়েছে। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে প্রথম বিদেশি অপারেটর পরিচালিত টার্মিনাল। চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ’র মতে, বন্দরের আন্তর্জাতিক মানোন্নয়নে এই বিদেশি বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “বন্দরের একার পক্ষে এই বিশাল উন্নয়ন সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।” অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে বন্দরে বিদেশি বিনিয়োগ ও উন্নয়ন কার্যক্রম আরও গতি পাবে বলে আশা করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। সরকার আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে নতুন টার্মিনালগুলোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে পূর্ণ অপারেশনে নিয়ে যেতে চায়। এই বিশাল উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক হাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।