মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। তিনি একই সঙ্গে আমদানি করা সব আইফোনে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপেরও হুমকি দিয়েছেন। আগামী ১ জুন থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে বলে তিনি জানান। তাঁর এই হুমকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, ইইউর সঙ্গে সমঝোতা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে এবং বর্তমানে চলমান আলোচনা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এই হুমকির পর ইইউর নেতারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছেন। ইইউ বাণিজ্যপ্রধান মারোস সেফকোভিচ বলেছেন, “হুমকি নয়, সম্মান এবং পারস্পরিক আলোচনা” এর ভিত্তিতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে বদ্ধপরিকর। সেফকোভিচ, মার্কিন বাণিজ্য দূত জেমিসন গ্রিয়ার এবং বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকের সঙ্গে ফোনালাপও করেছেন। এদিকে, ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি এমন একটি সময় এসেছে, যখন ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক নিয়ে আলোচনা স্থবিরতায় পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে, ইইউ তাদের বাজারে মার্কিন ব্যবসাগুলোর জন্য সুবিধা দিক, তবে ইউরোপের পক্ষ থেকে তা মানা হচ্ছে না। ট্রাম্প তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন যে, ইইউর বাণিজ্য বাধা, আর্থিক কারসাজি এবং মার্কিন কোম্পানির বিরুদ্ধে অযৌক্তিক মামলা যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিবছর ২৫ হাজার কোটি ডলার ক্ষতির সম্মুখীন করছে, যা তিনি অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। ইইউর সঙ্গে শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনা এক পর্যায়ে অচলাবস্থায় পৌঁছেছে। এর আগে, গত এপ্রিলে ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে পরে সেই শুল্ক অর্ধেক নামিয়ে আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত আলোচনার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ইউরো পণ্য রপ্তানি করেছে। এদিকে, ট্রাম্পের এই শুল্ক হুমকির পর বিশ্বজুড়ে শেয়ারবাজারে ব্যাপক দর পতন দেখা গেছে। ওয়াল স্ট্রিটের তিনটি প্রধান সূচক পুরো দিন ধরে নিম্নমুখী ছিল। বিশেষ করে প্রযুক্তিভিত্তিক নাসডাক সূচক ৩ শতাংশ কমে গেছে। প্যারিস এবং ফ্রাঙ্কফুর্টের বাজারও প্রায় ১.৫ শতাংশ কমেছে, এবং লন্ডনের এফটিএসই ১০০ সূচকও নেতিবাচক অবস্থায় নেমে এসেছে। এদিকে, ভারতীয় পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে ভারতকে অভিযুক্ত করেছে। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের ইস্পাত আমদানি করে এবং গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসন অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতজাত পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর পর, ভারত ডব্লিউটিও’র কাছে ২৯টি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের বার্তা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপের হুমকি এবং ইইউ এবং ভারতীয় সঙ্গে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে, যা এক নতুন পর্যায়ের বাণিজ্য উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।