যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তির প্রস্তাব পাঠিয়েছে, যা ওমানের মাধ্যমে তেহরানে পৌঁছানো হয়েছে। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, এই চুক্তিটি ইরানের স্বার্থে উপকারী হতে পারে, তবে চুক্তির নির্দিষ্ট শর্তাবলী এখনো প্রকাশ করা হয়নি। গত শনিবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে যে, এই প্রস্তাবের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করতে চাচ্ছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানান, ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আল বুসাইদি সম্প্রতি তেহরান সফরে এসে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত কিছু ‘মূল উপাদান’ বুঝিয়ে দিয়েছেন। এটি এমন একটি সময়ে এসেছে যখন জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ), ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার খবর দিয়েছে। আইএইএ এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইরান বর্তমানে ৬০ শতাংশ মাত্রায় ৪০০ কেজির বেশি ইউরেনিয়াম মজুদ করছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ মাত্রার কাছাকাছি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি এটি আরও পরিশোধন করা হয়, তাহলে এটি ১০টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি আইএইএ-র বোর্ডে ইরানকে পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘনকারী হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে ইরান এই অভিযোগগুলোকে “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” ও “ভিত্তিহীন” বলে খারিজ করেছে এবং সতর্ক করেছে যে, যদি আইএইএ-র বোর্ডে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তারা “উপযুক্ত জবাব” দেবে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইরানকে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। আরাগচি এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, “এই প্রস্তাবের জবাব আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থ ও জনগণের অধিকার অনুযায়ী দেব।” চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পর্দার আড়ালে আলোচনা চলছিল, এবং এখন পর্যন্ত উভয় পক্ষই এই আলোচনা নিয়ে আশাবাদী। তবে মূল বিতর্ক ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাওয়ার অধিকার নিয়ে। আইএইএ-র সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইরান গত তিন মাস ধরে প্রতি মাসে এমন মাত্রায় ইউরেনিয়াম তৈরি করছে যা একেকটি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক সূত্রের মতে, ইরান চাইলে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে অস্ত্র-মানের ইউরেনিয়াম তৈরি করতে পারে এবং কয়েক মাসের মধ্যে পারমাণবিক বোমা বানাতে সক্ষম। যদিও ইরান বরাবরই বলছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত।