গাজা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান দমন-পীড়নের প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছে। সোমবার ব্রাসেলসে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে সংস্থাটির পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কায়া ক্যালাস বলেছেন, গাজার পরিস্থিতি যদি পরিবর্তিত না হয়, তাহলে আগামী মাসে ইউরোপীয় দেশগুলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে।
ক্যালাস বলেন, “গাজা ও পশ্চিম তীরে যা হচ্ছে, তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো ফিলিস্তিনিদের জীবনযাত্রা কিছুটা সহজ করা এবং তাদের কষ্ট কমানো।” ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বৈঠকে ইসরাইলের সঙ্গে বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন। স্পেন ইতোমধ্যে চুক্তিটি সম্পূর্ণরূপে স্থগিত করার জন্য আবেদন করেছে।
স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসে মানুয়েল আলবারেস বলেছেন, “ইসরাইল আমাদের বন্ধু হতে পারে; তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে কথা বলা প্রয়োজন। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে এবং এজন্য তাদের জবাবদিহি করতে হবে।” তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আবেদনও করেছেন। বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড এবং সুইডেনও ইসরাইলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে, তবে জার্মানি, গ্রিস এবং ইতালির মতো দেশগুলো চুক্তি স্থগিত করার বিরুদ্ধে রয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা অক্সফামের একজন প্রতিনিধি বলেছেন, “যদি ইইউ দেরি করে বা সিদ্ধান্ত না নেয়, তবে সেটাও একটি বিপর্যয়। গাজায় প্রতিদিন মানুষ খাবারের সন্ধানে নিহত হচ্ছেন। অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে মারা যাচ্ছেন। প্রতিটি মুহূর্তের বিলম্ব আরও মৃত্যুর কারণ।”
গাজায় মানবিক সংকট ভয়াবহ, যা ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার কারণে অগ্রাহ্য করা যাবে না। এ কথা বলেছেন বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও মন্তব্য করেছেন, “গাজায় মানুষের অবস্থা ভয়াবহ। আমাদের নীরবে বসে থাকতে হবে না।”
অন্যদিকে, গাজায় হামলা চালাতে থাকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। সোমবার অবরুদ্ধ উপত্যকায় আরও ফিলিস্তিনি নিহত হন। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই অঞ্চলে বোমাবর্ষণ অব্যাহত থাকায় ত্রাণপ্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ও শোক ছড়িয়ে পড়েছে। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ২০ জন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল সমর্থিত বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রের সামনে অপেক্ষমাণ ত্রাণপ্রার্থী। ২০২৩ সালের অক্টোবর যুদ্ধের সূচনা হওয়ার পর গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৬ হাজারের বেশি এবং আহত হয়েছেন আরও লাখ লাখ মানুষ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর মঙ্গলবার জানায়, গাজায় ইসরাইলের সাহায্য ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়াচ্ছে এবং এটি একটি ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। তাদের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে যে, যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে এর মিল রয়েছে।
এদিকে, টানা ১২ দিনের সংঘাতের পর ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধবিরতির এই খবর দেশ দুটির পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এর পরেই ইসরাইলে নতুন দাবি উঠেছে, যেখানে গাজায় আটক ইসরাইলি বন্দিদের পরিবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে। এদিকে, ইসরাইলের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও সরকারকে একই ধরনের আহ্বান করেছে।