জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, যার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, গত ৬ মার্চ রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে, যেখানে তাদের কাছ থেকে ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। এই সুপারিশগুলো পাঁচটি সংস্কার কমিশনের দ্বারা তৈরি, এবং চিঠিটি ছিল মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চেন (এমসিকিউ) পদ্ধতিতে। এতে ১২০টি প্রশ্নের বিষয়ে দলগুলোর মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে, এবং প্রত্যেকটি প্রশ্নের জন্য তিনটি বিকল্প রেখেছে—‘একমত’, ‘একমত নই’, এবং ‘আংশিকভাবে একমত’। সাথে পাঠানো হয়েছিল পাঁচটি কমিশনের প্রতিবেদন। তবে, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল-জোট এমসিকিউ পদ্ধতির ব্যাপারে কিছুটা অনীহা প্রকাশ করেছে এবং সময় বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেছে, বিশেষ করে বিএনপি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গত সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে দুটি বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে—প্রথমত, সুপারিশের বিষয়ে দলটির একমত কি না, এবং দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য উপায় ও সময়কাল কী হবে।” এসবের জন্য ছয়টি বিকল্প রয়েছে, যার মধ্যে নির্বাচনকালীন অধ্যাদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে সংস্কারও অন্তর্ভুক্ত।
এদিকে, বিএনপি গত ৩ মার্চ তাদের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমসিকিউ পদ্ধতিটি নিয়ে সমালোচনা করেছে। দলটির নেতারা মন্তব্য করেছেন, “এটি যেন পরীক্ষার মতো, যেখানে দলগুলোর মতামতকে পরীক্ষার্থী হিসেবে আন্ডারমাইন্ড করা হচ্ছে।” তারা আরও জানিয়েছেন যে, বিষয়টি নিয়ে তাদের দলের মধ্যে আরও আলোচনা হবে এবং মিত্র দলগুলো সঙ্গে কথা বলবে। ইতিমধ্যেই বিএনপি কমিশনের কাছে অতিরিক্ত সময় চেয়েছে।
বিশ্লেষণ করা হয়েছে যে, পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে ১৬৬টি সুপারিশ রয়েছে। এর মধ্যে ৭০টি সুপারিশ সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত, ২৭টি নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে, ২৩টি বিচার বিভাগ সংক্রান্ত, ২৬টি জনপ্রশাসন সংক্রান্ত, এবং ২০টি দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত।
এছাড়া, ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিমও এই এমসিকিউ পদ্ধতির ব্যাপারে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব হিসেবে এটি আমাদের জন্য স্বস্তিকর নয়, এবং আমরা আরও সাত দিন সময় চেয়েছি।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, এর পরবর্তী ধাপে দলগুলোর মতামত পাওয়ার পর আলোচনা শুরু করবে। যদিও, কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা ঠিক করা হয়নি, কমিশন আশা করছে যে দলগুলো দ্রুত আলোচনার দিকে এগিয়ে আসবে এবং অবশেষে একটি ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি হবে।
অন্যদিকে, কমিশন জানিয়েছেন যে রোজার ঈদের আগেই দ্বিতীয় দফায় দল-জোটগুলোর সাথে সংলাপ শুরু করতে চায়, এবং বিএনপি, জামায়াত, এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি)-এর মতো উল্লেখযোগ্য দলগুলোর সাথে এককভাবে সংলাপ হবে। এছাড়া, ছোট দলগুলোকে নিয়ে সংলাপ হবে জোটবদ্ধভাবে।
এদিকে, বিএনপির পক্ষ থেকে প্রথম বৈঠকে সন্তোষজনক সময় না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলার প্রস্তুতি রয়েছে। তারা মনে করছে, যে পরিমাণ সময় অন্যান্য ছোট দলের নেতারা পেয়েছেন, বিএনপির প্রতিনিধি তেমন সময় পাননি, যা ভবিষ্যতে সংলাপের ক্ষেত্রে তাদের প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে।