আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ সম্প্রতি এক আলোচনায় ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রসঙ্গে চাঞ্চল্যকর কিছু মূল্যায়ন করেছেন। তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বড় ধরনের যুদ্ধের সম্ভাবনা কম থাকলেও দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি-স্থিতিশীলতা মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। অঞ্চলজুড়ে প্রভাবের আশঙ্কা ড. ইমতিয়াজ সতর্ক করে বলেন, “যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলে শুধু ভারত-পাকিস্তানই নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি ও নিরাপত্তা বিনষ্ট হবে। বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী দেশগুলো সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিশেষ করে বাণিজ্যিক সাপ্লাই চেইন, আকাশ ও সমুদ্রপথ বিঘ্নিত হওয়ায় আমদানি-রপ্তানি ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।” তিনি উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যে পানি চুক্তি স্থগিত, আকাশসীমা বন্ধ এবং ভিসা নীতিতে কঠোরতা সাধারণ মানুষের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। যুদ্ধের রাজনীতি ও অর্থনীতি এই বিশ্লেষকের মতে, “আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সংঘাতের সময় অস্ত্র উৎপাদনকারী দেশগুলোই সর্বাধিক লাভবান হয়। ভারত ইতোমধ্যে ফ্রান্সের সঙ্গে বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি সই করেছে।” তবে তিনি আশ্বস্ত করেন যে গণমাধ্যমে তৈরি হওয়া যুদ্ধের হাইপ এবং বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। বাংলাদেশের ভূমিকা প্রসঙ্গে ড. ইমতিয়াজ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে বলেন, “দুই দেশেরই বাংলাদেশের প্রতি আস্থার অভাব রয়েছে। আমাদের এখনো একটি স্বতন্ত্র ও পেশাদার পররাষ্ট্রনীতি গড়ে ওঠেনি। ফলে কাতার, সৌদি আরব বা তুরস্কের মতো মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালনের সুযোগ আমাদের নেই।” যুদ্ধের সম্ভাবনা কতটা? তিনি যুক্তি দেখান, “সীমান্তে নিয়মিত গোলাগুলি চললেও বড় যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় জনসমর্থন ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা উভয় দেশেরই সীমিত। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকট এবং ভারতের সাধারণ মানুষের যুদ্ধবিরোধী মনোভাব বড় সংঘর্ষের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।” সমাধানের পথ ড. ইমতিয়াজের মতে, “সমস্যার স্থায়ী সমাধান রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে উভয় পক্ষই ইস্যুটিকে অতিমাত্রায় রাজনীতিকরণ করছে, যা সমঝোতার পথকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে।” গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে অঞ্চলটিতে উত্তেজনা ক্রমাগত বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন, নতুবা পুরো দক্ষিণ এশিয়াই অস্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে।