বর্ণনা: লালন সাঁইয়ের ১৩৫তম তিরোধান দিবস উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ে প্রথমবারের মতো রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হলো বাউল সুর ও ভাবনায় ভিন্ন এক সন্ধ্যা। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে ঐতিহাসিক উদ্যানটি রাতভর মুখর ছিল লালন ভক্ত ও দর্শনার্থীদের পদচারণায়। আয়োজনের শুরুতেই প্রদর্শিত হয় লালন সাঁইয়ের জীবন ও দর্শন নিয়ে নির্মিত ভিডিওচিত্র। এরপর একে একে মঞ্চে আসেন দেশের খ্যাতিমান লালন শিল্পীরা—এ্যানি বৈরাগী, সুখলাল রায়, সূচনা শেলী, ফাহমিদা আহমেদ শিফা, বাউলা ব্যান্ড, টংয়ের গান, পথিক নবী এন্ড টিম ক্রিয়েটিভ, অরূপ রাহীসহ আরও অনেকে। জনপ্রিয় গান ‘সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে’, ‘আল্লাহ বলো মনরে পাখি’, ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘তিন পাগলের হলো মেলা’, ‘মিলন হবে কতদিনে’ ইত্যাদি পরিবেশনায় সুরের স্রোতে ডুবে যায় সমগ্র অনুষ্ঠানস্থল। শিল্পীদের পরিবেশনায় দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে গভীর মনোযোগে সুরের সমুদ্রে ডুবে যান, আর পরিবেশনা শেষে নীরবতা ভেঙ্গে মুহুর্মুহু করতালিতে শিল্পীদের প্রতি জানিয়ে দেন তাদের আন্তরিক অভিনন্দন। ‘ওয়ান মোর’ ধ্বনিতে জানান গান শোনার আকাঙ্ক্ষা। এ আয়োজনে আরও অংশ নেন নীরব অ্যান্ড বাউলস, দীনা মণ্ডল, মুজিব পরদেশী, কানিজ খন্দকার মিতু, সাগর বাউল, বেঙ্গল সিম্ফনি, লালন ব্যান্ডসহ দেশের স্বনামধন্য শিল্পীরা। দলীয় এবং একক পরিবেশনায় উঠে আসে লালনের দর্শন ও মানবতাবাদের বাণী। আয়োজনে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক তানজিম ইবনে ওয়াহাব, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা। এদিকে, লালনের তিরোধান দিবস উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং শিল্পকলা একাডেমি ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় লালন ধামে চলছে তিনদিনব্যাপী উৎসব, যা শেষ হবে রবিবার। লালন সাঁইয়ের দর্শন, তার গান আর মানবতার বাণীতে সুরে-সুরে সেজে উঠেছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। অসংখ্য মানুষের উপস্থিতিতে আবারও প্রমাণিত হলো, লালন কেবল একজন সাধক নন—তিনি বাংলার মাটিতে মানবতার অনন্য এক দ্যুতি।