ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে নতুন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)। গত বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ভারতের ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। সংস্থাটি ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ করে থাকে। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইউএসসিআইআরএফের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে, ছড়ানো হচ্ছে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য।
প্রতিবেদনে ২০২৪ সালের ওয়াক্ফ সংশোধনী বিলেরও উল্লেখ করা হয়েছে, যার লক্ষ্য ওয়াক্ফ বোর্ডে (ইসলামিক ট্রাস্ট বোর্ড) অমুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা। সেখানে তুলে ধরা হয়েছে, কীভাবে ২০২৪ সালজুড়ে উগ্রবাদীরা বিভিন্ন ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে, ধর্মীয় নেতাদের কীভাবে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের বাড়িঘর ও উপাসনালয়গুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে তাও এখানে তুলে ধরা হয়েছে। অভিযোগ তোলা হয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনা বিশেষ করে ধর্মীয় স্বাধীনতার গুরুতর লঙ্ঘন। এটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং তাদের উপাসনালয়গুলোর বিরুদ্ধে হিংসাত্মক আক্রমণকে উস্কে দেওয়ার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের ঘৃণাত্মক বক্তব্যসহ ভুল তথ্য এবং বিভ্রান্তির ব্যবহারও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।
গত জুনের নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ রাজনৈতিক নেতাদের ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’ বেড়ে যায়। ভারতীয় সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের দিকে মনোনিবেশ করে, যা অন্যায়ভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রভাবিত করে এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস চর্চার ক্ষমতা সীমিত করে দেয় বলে এখানে দাবি করা হয়েছে।
ইউএসসিআইআরএফ বলছে, ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার অবস্থা ক্রমাগত অবনতিশীল এবং এক উদ্বেগজনক গতিপথ অনুসরণ করছে।
প্রতিবেদনে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ), ইউনিফর্ম সিভিল কোড এবং বেশ কয়েকটি রাজ্য স্তরের ধর্মান্তরবিরোধী, গো-হত্যা আইনসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য ভারতের আইনি কাঠামোর পরিবর্তন এবং তার প্রয়োগ কীভাবে ঘটেছে, তারও বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
ইউএসসিআইআরএফ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে পরামর্শ দিয়ে বলেছে, ভারতকে ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ বা সিপিসি তালিকাভুক্ত করতে। কারণ, ভারত ধর্মীয় স্বাধীনতার নিয়মতান্ত্রিক, চলমান ও গুরুতর লঙ্ঘনে জড়িত। এসব বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তরকে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এতে।
এদিকে ভারত দৃঢ়ভাবে ইউএসসিআইআরএফের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবেদনটিকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে খারিজ করেছে এবং ইউএসসিআইআরএফকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বয়ান’ প্রচারের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে।
এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম বিষয়ে আমাদের মতামত আগের মতোই। এটি একটি রাজনৈতিক এজেন্ডাসহ একটি পক্ষপাতদুষ্ট সংস্থা। ভারতকে নিয়ে এটি ভুল উপস্থাপন করেই যাচ্ছে। আমরা এই পক্ষপাতদুষ্ট প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করি, যা কেবল ইউএসসিআইআরএফকে আরও অসম্মানিতই করে। খবর দ্য প্রিন্টের।