অবশেষে নিলামে উঠছে এমপি সুবিধায় আনা বিলাসবহুল ২৪টি গাড়ি। ইতিমধ্যে নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া আরও ১৮টি গাড়িসহ পর্যায়ক্রমে ৪২টি গাড়ি নিলামে ওঠার কথা রয়েছে। সংসদ সদস্য হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা এসব গাড়ি গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর আর আনতে যাননি সাবেক এমপিরা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কারশেডে থাকা গাড়িগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমদানিকারক ডেলিভারি নেয়নি বলে এগুলো নিলামে উঠানোর জন্য কাস্টমসকে চিঠি দেওয়ার পর এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিলামের আগে আমদানিকারকের ঠিকানায় দুই দফায় অবগত চিঠি ইস্যু করতে হয় এবং প্রথম দফার চিঠি গতকাল পাঠানো হয়েছে।ল্যান্ড ক্রুজার, রেঞ্জ রোভার, টয়োটা জিপ, টয়োটা এলসি স্টেশন, মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউর মতো বিলাসবহুল গাড়ি। বর্তমানে এসব গাড়ির প্রতিটির বাজারমূল্য ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। শুল্কমুক্ত সুবিধার কারণে এসব গাড়ি শুধু আমদানিমূল্যেই প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। জাপান ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা ৪২টি গাড়ি ডেলিভারি নেওয়ার আগেই সংসদ ভেঙে যাওয়ায় এখন আর শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি নেওয়ার সুযোগ নেই। শুল্ক দিতে গেলে প্রতিটি গাড়ির শুল্ক আসবে ৮ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে এসব গাড়ি নামার ৩০ দিনের মধ্যে তা ডেলিভারি না নিলে বিধি অনুযায়ী নিলামে উঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়।এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাহাজ থেকে গাড়ি নামানোর পর চট্টগ্রাম বন্দরের কারশেডে গাড়িগুলো রাখা হয়েছে। কিন্তু ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারকের পক্ষ থেকে গাড়িগুলো ডেলিভারি নেওয়া হয়নি। তাই এগুলো নিলামে উঠানোর জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ গত ১৪ সেপ্টেম্বর এসব গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে বলে জানা যায়।এদিকে বিগত সরকারের এমপিদের কোটায় আনা গাড়িগুলোর বিষয়ে গত ২১ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস। সেই চিঠিতে এসব গাড়ির বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল। নির্দেশনা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। নির্দেশনা এসেছে কি না, জানতে চাইলে সরকারি এসব গাড়ির দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার অনুরূপা দেব বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই এগুলোর বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যে এসব গাড়ি নিলামে উঠানোর জন্য চিঠি দিয়েছে, তাহলে এসব গাড়ির ভাগ্যে কী ঘটবে? এই প্রশ্নের জবাবে অনুরূপা দেব বলেন, ‘নিলামের বিষয়টি নিলাম শাখা বলতে পারবে।’
এ বিষয়ে নিলাম শাখার ডেপুটি কমিশনার ও কাস্টমসের মুখপাত্র সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে নির্দেশনা না এলেও এখন সিদ্বান্ত নেওয়া যাবে। যেহেতু ৩০ দিনের মধ্যে এসব গাড়ি আমদানিকারক ডেলিভারি নেননি, আবার বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকেও তালিকা পাঠানো হয়েছে। তাই আমরা নিলামের প্রক্রিয়া শুরু করেছি।’
নিলামের প্রক্রিয়াটি কী? জানতে চাইলে সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘এজন্য আমরা সংশ্লিষ্ট আমদানিকারককে পর পর দুটি চিঠি ইস্যু করব। তারা শুল্ক দিয়ে গাড়ি ডেলিভারি নেবেন কি না তা নিশ্চিত হতে। যদি শুল্ক দিয়ে গাড়ি নেন, তাহলে নিতে পারবেন। কিন্তু শুল্কমুক্ত সুবিধায় আর গাড়ি নেওয়ার সুযোগ নেই।’
দুটি চিঠিতে কী কেমন সময় লাগতে পারে? জানতে চাইলে সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি চিঠির জবাবের জন্য কমপক্ষে ১৫ দিন করে দুই চিঠির জন্য প্রায় এক মাস সময় লাগতে পারে। এক মাস পর আমরা নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
যে ২৪ এমপির গাড়ি নিলামে উঠছে তাদের মধ্যে রয়েছেন পিরোজপুর-২-এর মহিউদ্দিন মহারাজ, ময়মনসিংহ-৭-এর এ বি এম আনিসুজ্জামান, বগুরা-৫-এর মোহাম্মদ মজিবুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-২-এর জিন্নাত আরা হেনরি, সুনামগঞ্জ-১-এর রনজিত চন্দ্র সরকার, নেত্রকোনা-৪-এর সাজ্জাদুল হাসান, গাইবান্ধা-২-এর শাহ সারোয়ার কবির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১-এর এস এ কে একরামুজ্জামান, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু-)-এর এস এম আল মামুন, খুলনা-৩-এর এস এম কামাল হোসাইন, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)-এর মুজিবুর রহমান, নওগাঁ-৩-এর সুরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, সংরক্ষিত নারী আসন-১৩-এর অভিনেত্রী তারানা হালিম, ঝিনাইদহ-২-এর নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, জামালপুর-৫-এর আবুল কালাম আজাদ, সুনামগঞ্জ-৪-এর মুহাম্মদ সিদ্দিক, চট্টগ্রাম-১৫-এর আবদুল মোতালেব, সংরক্ষিত নারী আসন-১৪-এর শাম্মী আহমেদ, ময়মনসিংহ-১১-এর আবদুল ওয়াহেদ, সংরক্ষিত নারী আসন ১২-এর রুনা রেজা, যশোর-২-এর তৌহিদুজ্জামান, টাঙ্গাইল-৮-এর অনুপম শাহজাহান জয়, নীলফামারী-৩-এর সাদ্দাম হোসাইন পাভেল ও সংরক্ষিত নারী আসন-৩৫-এর ফরিদা ইয়াসমিন। তাদের গাড়ি বন্দরের কারশেডে রয়েছে।
বিগত সরকার ক্ষমতায় আসার পর স্পিকারের অনুমোদন নিয়ে ৫০ সংসদ সদস্য শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে গাড়ি আমদানি করেছিলেন। বেশিরভাগ গাড়ি জাপান থেকে অর্ডার দেওয়া হয়েছে। সবগুলো গাড়ির গায়ে এমপির নাম লেখা রয়েছে। এই ৫০ জনের মধ্যে আটজন সদস্য ৫ আগস্টের আগে গাড়ি ডেলিভারি নিয়ে গিয়েছিলেন। পর্যায়ক্রমে বাকি এমপিদের গাড়িও নিলামে উঠবে।