বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের ভবিষ্যত ও তদারকি কাঠামো নিয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন যে, ব্যাংক খাতের যথাযথ উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক পরিবেশের পরিবর্তন, যা একে শক্তিশালী করার পথে অন্যতম বাধা। গভর্নর বলেন, একমাত্র রাজনৈতিক পরিবর্তনই নিশ্চিত করতে পারে যে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও দেশের ব্যাংক খাতের নীতিমালাগুলো কার্যকরী হতে পারবে এবং খাতটি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। গভর্নর আরও জানান যে, বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন একটি ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি (রিস্ক বেসড সুপারভিশন) পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে, যা আগামী ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হবে। এই ব্যবস্থাটি ব্যাংক খাতের তদারকি ব্যবস্থা আরও আধুনিক ও দক্ষ করবে, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামোয় একটি নতুন যুগের সূচনা করবে। এই পদ্ধতিতে ৩৬০ ডিগ্রি সুপারভিশন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে, যা বিভিন্ন দিক থেকে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। তবে গভর্নরের মন্তব্য অনুযায়ী, শুধু নীতিগত পরিবর্তনেই ব্যাংক খাতের সংস্কার সম্ভব নয়; এর জন্য রাজনৈতিক দৃঢ়তা ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজে যদি কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপ না থাকে, তাহলে ব্যাংক খাতের উন্নয়ন সম্ভব হবে।” ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে গভর্নর জানিয়ে দেন, বেশ কিছু দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংকের পুনর্গঠন এবং একীভূতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ছয়টি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকের সঙ্গে আবার বৈঠক করা হবে, এবং যদি তারা যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারে তবে একীভূতকরণের প্রক্রিয়া স্থগিত করা হতে পারে। দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, “বোর্ড পুনর্গঠনের পর কিছু ব্যাংক ভালো কাজ করছে, তবে যারা এখনও কার্যকর ফলাফল দেখাতে পারেনি, তাদের বোর্ড পুনর্গঠন করা হবে।” অন্যদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার যৌক্তিকতা তুলে ধরতে পারে। প্রয়োজনে কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে। এছাড়া, গভর্নর ডলারভিত্তিক রিজার্ভ ব্যবস্থার পরিবর্তন নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন, এবং নতুন পণ্য মুদ্রা বা অন্যান্য সম্পদ সংগ্রহের দিকে নজর দিচ্ছেন। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির বহুমাত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে, যা আগামী দিনে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে। তবে, সবকিছুই রাজনৈতিক পরিবর্তনের উপর নির্ভরশীল, এবং গভর্নর আশাবাদী যে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো দেশব্যাপী ব্যাংক খাতের উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।