প্রায় ১৫৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও তাঁর ছেলে, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও তাঁর স্ত্রী এবং সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও তাঁর স্ত্রী-মেয়ের বিরুদ্ধে পৃথক ছয়টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল সংস্থাটির ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এসব মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক আকতার হোসেন। মামলায় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে ৬১ কোটি ৫৬ লাখ এবং তাঁর ছেলে রাহাত মালেকের বিরুদ্ধে ১১ কোটি ৮৪ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও তাঁর স্ত্রী আরিফা জেসমিনের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে প্রায় ১৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ। আর সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুই মামলায় ৭২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দুদক জানায়, জাহিদ মালেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে নিজের ৩৪টি ব্যাংক হিসাবে পরস্পর যোগসাজশে ১৪৩ কোটি ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯৭ টাকা জমা করেন, উত্তোলন করেন ১১৫ কোটি ৮৫ লাখ ৬ হাজার ৪৬৫ টাকা। এভাবে হস্তান্তর, রূপান্তর এবং স্থানান্তরের মাধ্যমে তিনি সন্দেহজনক অসংখ্য লেনদেন করেছেন। একই সঙ্গে তাঁর অবৈধ ১১ কোটি ৪৯ লাখ ৮৪ হাজার ১৬১ টাকা বৈধ করার জন্য ছেলে রাহাত মালেকের নামে অর্জন দেখিয়েছেন। রাহাত মালেক নিজের এবং তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবহৃত ব্যাংক হিসাবে মোট ৬৬৮ কোটি ৭১ লাখ ১৮ হাজার ৬৬৩ টাকা জমা এবং ৬৬৬ কোটি ৫৬ লাখ ৬৩ হাজার ১৬২ টাকা উত্তোলন করেছেন। এভাবে হস্তান্তর, রূপান্তর এবং স্থানান্তরের মাধ্যমে অসংখ্য সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন।
জাহিদ মালেকের স্ত্রী শাবানা মালেক জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৩ কোটি ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৮২৭ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এ ছাড়া তাঁর নামে ও বেনামে আরও সম্পদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে রাহাত মালেকের স্ত্রী সাকিবা মালেক জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৯ কোটি ২৮ লাখ ৯৪ হাজার ৫৪৫ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। তাঁরও নামে-বেনামে আরও সম্পদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। জাহিদ মালেকের মেয়ে সাদিয়া মালেক ১ কোটি ৮৬ লাখ ৯৮ হাজার ৩২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। আরেক মেয়ে সিনথিয়া আকমল ২ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার ২৯৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। এঁদেরও নামে-বেনামে আরও সম্পদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে জুনাইদ আহমেদ পলক ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ২৫টি ব্যাংক হিসাবে ৩২ কোটি ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৩১৪ টাকা জমা করেছেন। আর উত্তোলন করেছেন ২৯ কোটি ৮৪ লাখ ৭২ হাজার ৯৫ টাকা। এসব অস্বাভাবিক লেনদেন দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে পাওয়া টাকায়। তাঁর স্ত্রী আরিফা জেসমিনের ৯ কোটি ৫৮ লাখ ৯৩ হাজার ৪৩৩ টাকার অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে। আরিফা তাঁর ৩১টি ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনক মোট ২২ কোটি ৩৪ লাখ ৭১ হাজার ৯৭৯ টাকা জমা এবং ১৭ কোটি ৫৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৭ টাকা উত্তোলন করেন।
এ ছাড়া সাবেক বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে এবং তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ৬৭ হাজার ২০০ এবং তাঁর মেয়ে মির্জা আফিয়া আজম অপির নামে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। মির্জা আজম ও তাঁর স্ত্রী দেওয়ান আলেয়া এবং তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানির নামে মোট ৬০টি ব্যাংক হিসাবে চলতি বছর পর্যন্ত মোট ৭২৫ কোটি ৭০ লাখ ৪২ হাজার ২৩২ টাকা জমা এবং ৭২৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৩ হাজার ৭১৫ টাকা উত্তোলন করা হয়। এভাবে অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে অবৈধ টাকা হস্তান্তর, স্থানান্তর এবং রূপান্তরের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং করেছেন। এককভাবে দেওয়ান আলেয়ার নামে-বেনামে ২৩ কোটি ৭৭ লাখ ৭১ হাজার ৯৯৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ পাওয়া গেছে।