ঋণের উচ্চ সুদ, জ্বালানির আকাশচুম্বী মূল্য, অতিমূল্যায়িত ডলার, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা—এসব সংকটের জালে আটকে পড়েছে ব্যবসা-বিনিয়োগ। বৈশ্বিক শুল্কযুদ্ধের প্রভাবে রপ্তানি বাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। নতুন করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি দেশের বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতাকে একেবারে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি ১২.৬৭ শতাংশ ছাড়ানোর শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। শিল্প-কারখানার উদ্যোক্তারা বলছেন, গ্যাসের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিতে শিল্প খাত টিকবে না। নতুন বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থানও পড়বে ঝুঁকিতে। রপ্তানি শিল্পে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা করছেন তারা। গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর ফলে পুরো শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেও সতর্ক করেছেন। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি। ২০২৩ সালে শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের দাম ১৭৯ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। এবারের মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বাড়তি দাম দিয়েও নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি না পেলে বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতা কমে যাবে। বেসরকারি খাতভিত্তিক থিংকট্যাংক বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, এই মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এসেছে এমন এক সময়ে যখন বৈশ্বিক কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, রপ্তানি বাজারের অস্থিরতা, বিদ্যুৎ ঘাটতি, জ্বালানির অনির্ভরযোগ্যতা, যুক্তরাষ্ট্রের ভারসাম্যমূলক শুল্কারোপ—এসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন বৈদেশিক বিনিয়োগের অপেক্ষায় থাকা শিল্প খাত এই মূল্যবৃদ্ধির কারণে নিরুৎসাহী হয়ে পড়বে। মূলধনী যন্ত্রপাতি, মধ্যবর্তী পণ্য, পেট্রোলিয়াম, শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য—এসব একটি অর্থনীতির প্রাণভোমরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উল্লিখিত পাঁচ সূচকের মধ্যে তিনটিই নেতিবাচক। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি ২৫.২২ শতাংশ কমেছে, মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি ৮.৫০ শতাংশ কমেছে, পেট্রোলিয়ামের আমদানি বেড়েছে ১.৫৯ শতাংশ, শিল্প কাঁচামালের আমদানি বেড়েছে ১০.৪১ শতাংশ এবং ভোগ্যপণ্যের আমদানি কমেছে ১.২৯ শতাংশ। এসব তথ্য বেসরকারি খাতের নাজুক পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী (পারভেজ) বলেন, ‘দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি। নতুন বিনিয়োগ তেমন হচ্ছে না। এলসি খোলা কমে গেছে। এর অর্থ হলো শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ভালো নয়। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’র মতো। আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর চেয়ে ঋণের সুদহার বেশি। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, সেগুলোর সমাধান না হলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।’ ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘গ্যাসের মূল্য ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি এবং ঋণের সুদের হার বাড়ার ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে, যা সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এর ফলে বাজারে একটি অসম প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, যা নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহ করছে এবং শিল্পায়নের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করছে।’ বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স