বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ প্রকল্প নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি বেশ জটিল এবং বহুমুখী ইস্যুর সঙ্গে জড়িত। প্রথম স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের পর দ্বিতীয় প্রকল্পটি যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। নিম্নোক্ত বিষয়গুলো প্রকল্পের অনিশ্চয়তার মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে:
১. অস্বাভাবিক চুক্তির শর্ত
- রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির আর্থিক শর্তগুলো স্বাভাবিকের তুলনায় ব্যতিক্রমী এবং দেশের স্বার্থবিরোধী বলে মনে হচ্ছে।
- সফট লোনের ক্ষেত্রে সাধারণত ১-১.৫% সুদগ্রহণের প্রথা থাকলেও রাশিয়া ৫%-এরও বেশি সুদের হার প্রস্তাব করেছিল।
২. অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অসংগতি
- প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকা, যা বিশাল অঙ্কের।
- ক্ষমতাসীন সরকার মনে করছে, এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি এবং উচ্চ ব্যয়ের প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নেওয়া নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব হওয়া উচিত।
৩. নামকরণ এবং অরবিটাল স্লটের প্রশ্ন
- বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ইতোমধ্যেই মহাকাশে রয়েছে। দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের জন্য নাম পরিবর্তনের বিষয়েও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
- নতুন স্যাটেলাইটটি ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৩০০-৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থান করত, ফলে অরবিটাল স্লট প্রয়োজন ছিল না।
৪. রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব
- ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রুশ প্রতিষ্ঠান গ্লাভকসমসের সঙ্গে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরিত হলেও যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে প্রকল্পের কাজ বিলম্বিত হয়।
৫. বর্তমান সরকারের অবস্থান
- ক্ষমতাসীন সরকার আপাতত প্রকল্পটি স্থগিত রেখেছে এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর তা ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
৬. বিএসসিএল-এর পর্যালোচনা
- বিএসসিএল প্রকল্পটির আর্থিক, চুক্তিভিত্তিক এবং নীতিগত অসংগতিগুলো যাচাই-বাছাই করছে।
- সংশ্লিষ্টরা প্রকল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এবং সমস্যাগুলোর উৎস খুঁজছেন।
সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ
বর্তমানে প্রকল্পটি প্রায় অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে। একদিকে, আর্থিক ও রাজনৈতিক জটিলতা এবং অন্যদিকে সঠিক চুক্তির অনুপস্থিতি প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার এ বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই প্রকল্প বাংলাদেশের মহাকাশ প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও এটি বাস্তবায়নের জন্য স্বচ্ছ এবং দেশের স্বার্থরক্ষাকারী পরিকল্পনা অপরিহার্য।