ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা: নতুন প্রশাসনের চ্যালেঞ্জ
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি ওয়াশিংটনের তথাকথিত ‘আবর্জনা’ সরাবেন। দ্রব্যমূল্য হ্রাস করা থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা—এসব তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি ছিল। পাশাপাশি, অবৈধ অভিবাসীদের দেশ ছাড়ার কাজও শুরু করার ঘোষণা দেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতির কতটা তিনি পূরণ করতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প নিজেই স্বীকার করেছেন, দ্রব্যমূল্য কমানো সম্ভব নয়। তিনি টাইম ম্যাগাজিনকে বলেছেন, “জিনিসপত্রের দাম একবার বাড়লে তা কমানো কঠিন।”
ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য ঘোষিত মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্যের পরিচয় দক্ষ প্রশাসক নয়, বরং বিলিয়নিয়ার হিসেবে। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার নানা বিতর্কে জড়িত। ভাষ্যকারদের মতে, ট্রাম্প ক্যাবিনেট গঠনে নীতির চেয়ে স্বজনপ্রীতির ওপর জোর দিচ্ছেন। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মন্ত্রিসভায় অন্তত ১৫ জন বিলিয়নিয়ার বা মাল্টি বিলিয়নিয়ার থাকবেন। এঁদের মধ্যে ইলন মাস্কের ব্যক্তিগত সম্পদ প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার।
ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি ছিল সাধারণ আমেরিকানদের জীবনমান উন্নত করা। কিন্তু তাঁর প্রস্তাবিত নীতিমালা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইলন মাস্কের মতো বিলিয়নিয়ারদের হাতে নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিলে দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ খাতগুলো সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মাস্ক ইতিমধ্যে বাজেট থেকে দুই ট্রিলিয়ন ডলার ছাঁটাই করার পরিকল্পনা দিয়েছেন। কিন্তু মার্কিন বাজেটের প্রধান খাতগুলো—প্রতিরক্ষা, মেডিকেয়ার, ও সামাজিক নিরাপত্তা—এগুলোর বরাদ্দ কমানো প্রায় অসম্ভব। ফলে কাটছাঁটের জন্য টার্গেট হবে দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সহায়তা, শিক্ষা, ও পরিবেশ সংরক্ষণের মতো খাত।
অতি ধনী ব্যক্তিদের হাতে নীতিমালা দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করবে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। যেমন, ইলন মাস্ক তাঁর চালকবিহীন টেসলা গাড়ির কারণে বারবার সরকারি তদন্তের মুখে পড়েছেন। মাস্ক সেই সব নিয়ম পরিবর্তন করতে চান, যা ভোক্তাদের সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্প প্রশাসনের আরেকটি লক্ষ্য হলো নিয়মকানুন শিথিল করা। ট্রাম্প তাঁর প্রথম প্রশাসনে পরিবেশ সংক্রান্ত ১০০টির বেশি নিয়মকানুন বাতিল করেছিলেন। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসলে সুপেয় পানি ও বাতাস সংরক্ষণের নিয়মকানুন এবং তেল-গ্যাস আহরণে বাধা তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ট্রাম্পের মন্ত্রিসভায় স্বজনপ্রীতির একাধিক উদাহরণ রয়েছে। যেমন, প্রতিরক্ষা বিভাগের জন্য মনোনীত পিট হেগসেথের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা নেই। তবুও তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে ফক্স নিউজে ট্রাম্পের পক্ষে বারবার সাফাই দেওয়ার কারণে।
ট্রাম্প তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসাচ্ছেন। যেমন, তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্রের সাবেক বাগ্দত্তা কিমবারলি গুইলফয়েলকে গ্রিসের রাষ্ট্রদূত, কনিষ্ঠ পুত্রের স্ত্রী লারা ট্রাম্পকে ফ্লোরিডার সিনেট প্রার্থী, এবং কন্যা ইভাঙ্কার শ্বশুর চার্লস কুশনারকে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত করার কথা ভাবছেন। উল্লেখ্য, চার্লস কুশনার কর ফাঁকির অভিযোগে দুই বছর কারাদণ্ড ভোগ করেছেন।
ট্রাম্পের এই মন্ত্রিসভা এবং নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হলে সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়তে পারে। এ ছাড়া দুর্নীতি, পরিবেশ বিপর্যয়, এবং দরিদ্রদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।