বিএনপি, দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল, আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হতে যাচ্ছে, যেখানে তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ এবং একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপের দাবি জানাবে। এই দুইটি বিষয় সরকারের প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করবে বিএনপির পরবর্তী পদক্ষেপ। দলের নেতারা আলোচনা করবেন, কী ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দাবির প্রতি সরকারের অবস্থান কী। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশাবাদী যে, ‘আলোচনা ও ঐক্যের’ মাধ্যমে নির্বাচনের রোডম্যাপের বিষয়টি সমাধান হবে। আজ দুপুর ১২টায় রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদল বৈঠক করবে। বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্য প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকের আগে, গত রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সালাহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, “আলোচনা অনেক বিষয়েই হবে, তবে মুখ্য বিষয় হলো জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ। আমরা স্পষ্টভাবে এই দুটি বিষয়ে জানতে চাইব। সরকারের জবাবের ওপর নির্ভর করবে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্বাচনি সংস্কারের বিষয়গুলোও আলোচনায় স্থান পাবে, বিশেষ করে নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), প্রশাসন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও পদায়নের বিষয়গুলো। বৈঠকের প্রেক্ষাপটে, বিএনপির নেতারা সরকারের তরফ থেকে সর্বশেষ যে তথ্য পেয়েছেন, তা হলো চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি মনে করে, এটি কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নয়। তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানতে চাইবে, আসলে সরকার কী ভাবছে এবং তাদের অবস্থান কী। এদিকে, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। বিএনপি, দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে, নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুস্পষ্ট রূপরেখা জানতে চাইবে, যাতে জনমনে বিভ্রান্তি দূর হয়। কারণ, সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক বক্তব্য এবং সময়সীমা ঘোষণায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “১৭ বছর ধরে আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছি। আমরা আশা করেছিলাম, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর তারা নির্বাচনের চিন্তা করবে। কিন্তু এখনো আমাদের বিভ্রান্তিতে ফেলেছে।” তিনি আরও বলেন, “ড. মুহাম্মদ ইউনূস সবার কাছে একজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। কিন্তু তার বক্তব্যে যে অসঙ্গতি রয়েছে, তা পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।” বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো সরকারের ঘোষিত সময়সীমা নিয়ে অসন্তুষ্ট। তারা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের দাবিতে রাজপথে নামার পরিকল্পনা করছে। দলের নেতারা মনে করেন, চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচন আদায় করা তাদের প্রধান লক্ষ্য। যদি ডিসেম্বরের পর নির্বাচন হয়, তাহলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মতে, তাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে যেকোনো মূল্যে চলতি বছরের মধ্যে নির্বাচন আদায় করা। নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না পেলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দেশে ফিরতে পারবেন না। এভাবে, রাজনৈতিক অঙ্গনে চলমান আলোচনা এবং জল্পনা-কল্পনার মধ্যে, আজকের বৈঠকটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিতে পারে, যা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে।