গতিহীন ব্যবসা-বাণিজ্যের সংকট ও অস্বস্তির মধ্যে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তারা নানা চাপে রয়েছেন, যেখানে আমদানি, উৎপাদন ও বিপণনে স্বস্তি মিলছে না। বাজেটের মূল লক্ষ্য হবে অর্থনীতির ভারসাম্য বজায় রেখে ব্যবসা-বাণিজ্যকে চাঙ্গা করা এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা। তবে, শিল্পোদ্যোক্তা ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বেসরকারি খাতের কর্মকাণ্ড চাঙ্গা করা এবং বৈশ্বিক শুল্কযুদ্ধের কারণে রপ্তানি বাজারে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়া মূল চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে বিনিয়োগে মন্দা চলছে এবং গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি দেশের বেসরকারি খাতের প্রতিযোগিতা-সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। মূলধন ঘাটতির কারণে বিদ্যমান ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে, ফলে নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা কমে গেছে। এ অবস্থায়, শিল্প খাতকে টেনে তুলতে বাজেটে দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার দাবি উঠেছে। আগামী ২ জুন টেলিভিশনে বাজেট ঘোষণা করা হবে, যা পরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাস হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটটি সংকোচনমূলক হতে যাচ্ছে, যার আকার হবে সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান বাজেটের তুলনায় এটি সাত হাজার কোটি টাকা কম। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, যা ৯-১০ শতাংশের ঘরে রয়েছে, নতুন বাজেটে ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা থাকবে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৫.৫ শতাংশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেওয়া হতে পারে পাঁচ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, নতুন বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য প্রণোদনা কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যৌক্তিক কর ব্যবসায়ীদেরও দিতে হবে। সারা জীবন প্রণোদনা দেওয়া সম্ভব নয়।’ এদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের কারণে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর চাপ রয়েছে, যা করছাড় ও অব্যাহতি কমানোর সিদ্ধান্তের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে বেসরকারি খাত বহুমুখী চাপে রয়েছে। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, জ্বালানি খাতে অস্থিতিশীলতা এবং ঋণের উচ্চ সুদহারের কারণে ব্যবসার ব্যয় বেড়ে গেছে। তিনি স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষার জন্য বাজেটে কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। জাপানি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতাকে ব্যবসার জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা বলছে, সরকারের অস্পষ্ট নীতি ব্যবস্থাপনা এবং বৈদ্যুতিক অবকাঠামোর ঘাটতি ব্যবসার পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলছে। এদিকে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির বাজারে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর দিকে সরকারের মনোযোগ রয়েছে, যা স্থানীয় শিল্পে করের চাপ বাড়াতে পারে। এনবিআর সূত্র জানায়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল হ্যান্ডসেট শিল্পেও করের চাপ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা মনে করেন, বিনিয়োগ বাড়ানো না গেলে নতুন কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে। তারা স্থানীয় শিল্পকে এগিয়ে নিতে সহায়তা সম্প্রসারণের সুপারিশ করেছেন। এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে বাজেটের মূল লক্ষ্য হবে ব্যবসা-বাণিজ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনা। এভাবে, আগামী বাজেটটি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে, যেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।