অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে অভূতপূর্ব লুটপাটের চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, বিশ্বের কোথাও এভাবে ব্যাংক খাতের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়নি। মঙ্গলবার সচিবালয়ের মাল্টিপারপাস হলে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাবে দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারে বা ‘আইসিইউ’র মতো অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এই অবস্থা থেকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে, যদিও আরও দ্রুত অগ্রগতি হলে ভালো হতো। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে গত এক বছরে আর্থিক খাতের সংস্কার, ব্যাংক খাতের পুনর্গঠন, এনবিআর সংক্রান্ত বিষয়সহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরা হয়। ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ব্যাংক খাতে লুটপাটের মাত্রা এতটাই ভয়াবহ যে, একটি ব্যাংকের ৯৫ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়ে গেছে, যা মূলত চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের দ্বারা আত্মসাৎ করা হয়েছে। “এটা আমার-আপনার টাকা,” তিনি মন্তব্য করেন, জনগণের অর্থের এই অপব্যবহারের তীব্র সমালোচনা করে। তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিলিপিন্সে পাচার হয়েছে, যা ফেরত আনতে প্রচণ্ড প্রচেষ্টা চলছে। এছাড়া ১২টি দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার জন্য, যদিও এটি সহজ কাজ নয়। তবে তিনি আশার কথাও শোনান। মূল্যস্ফীতি কমে ৮ শতাংশের ঘরে নেমেছে, এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বর্তমানে ৩.৯ শতাংশ হলেও বছর শেষে ৫ থেকে ৫.৭ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। “আমরা একেবারে খারাপ অবস্থায় নেই,” বলেন তিনি, অতিরিক্ত নেতিবাচক ধারণার বিরুদ্ধে সতর্ক করে। বেসরকারি খাতে আস্থার সংকট এখনো রয়েছে, তবে ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা এবং রিজার্ভ বৃদ্ধির ফলে এলসি খোলার সমস্যা অনেকটাই কমেছে। ব্যাংক একীভূতকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কাজ চলছে, তবে কতগুলো ব্যাংক একীভূত হবে বা কবে হবে, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে চাননি। ভবিষ্যতে নির্বাচিত সরকার এই প্রক্রিয়া বন্ধ করলে কী হবে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে, তবে পুরোপুরি ভিন্ন পথে গেলে কিছু করার থাকবে না। সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, শুরু করা উদ্যোগগুলো এগিয়ে নিতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এবং এটি অব্যাহত রাখতে হবে। বেসরকারি খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তিনি উল্লেখ করেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও বাংলাদেশ অগ্রগতি অর্জন করেছে, এবং ব্যবসায়ীদের অভিযোগ কিছুটা কমেছে। অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্যে অর্থনীতির গভীর সমস্যার স্বীকৃতির পাশাপাশি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের আশার আলো ফুটে উঠেছে। দুর্নীতি দমন, আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা এবং আস্থা পুনরুদ্ধারের চলমান প্রচেষ্টা বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ গতিপথকে উজ্জ্বল করছে।