জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনেই দেশজুড়ে গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা জানান। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিষ্ঠা, হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং দেশে জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য দেন। তিনি জানান, গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শিগগিরই প্রথম রায় দেবে এবং প্রথমবারের মতো গুমসহ বিভিন্ন নৃশংস অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে।সংস্কার প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্ট কমিশনের মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতা, আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা, ডিজিটালাইজেশন, দুর্নীতি প্রতিরোধসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার বাস্তবায়িত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকার সংসদে এসব সংস্কারকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণ করবে।তিনি আরও জানান, রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে প্রায় নয় মাস ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হয়েছে। এতে অধিকাংশ সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য অর্জিত হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য যেমন, বিশ্ব রাজনীতির জন্যও এক অনন্য ঘটনা বলে উল্লেখ করেন তিনি।প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই সনদে সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত ৩০টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে, যা ঐতিহাসিক অর্জন। সংস্কারের বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও মূল নীতি ও লক্ষ্য নিয়ে দ্বিমত নেই বলে জানান তিনি।সবশেষে তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার আজকের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ অনুমোদন করেছে। গণভোট আয়োজনসহ গুরুত্বপূর্ণ বিধান এতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এতে সংস্কার প্রক্রিয়া আরও বেগবান হবে এবং নির্বাচন উৎসবমুখর ও সাশ্রয়ী হবে বলে আশা করেন প্রধান উপদেষ্টা।তিনি আরও জানান, গণভোটের জন্য প্রয়োজনীয় আইন খুব শীঘ্রই প্রণয়ন করা হবে, যাতে নির্ধারিত সময়ে একসঙ্গে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন নিশ্চিত করা যায়। এই সিদ্ধান্তকে দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথে অত্যন্ত বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।