গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ইতিবাচক মানসিকতার অধিকারী তারা সাধারণত দীর্ঘজীবী হয়। তবে বংশানুক্রমিকভাবে আশাবাদী না হলে কী করার আছে?
‘বস্টন হেল্থকেয়ার সিস্টেম’য়ের ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, ভেটেরান্স অ্যাফেয়ার্স বস্টন হেল্থকেয়ার সিস্টেম’য়ের গবেষকরা ৭০ হাজার মানুষের ওপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে দেখতে পান, যারা কম আশাবাদী তাদের তুলনায় বেশি আশাবাদীরা অন্তত ৮৫ বছর বা বেশি বয়স পর্যন্ত বাঁচে।
‘পিএনএএস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত ২০১৯ সালের এই গবেষণার সূত্র ধরে হার্ভার্ড টি.এইচ. চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ’য়ের ‘কুম শিউং সেন্টার ফর হেল্থ অ্যান্ড হ্যাপিনেস’য়ের সহকারী পরিচালক লরা কাবজানস্কি বলেন, “আশাবাদের শক্তি শুধু সূর্যের আলোর মুখ দেখায় না, এটা ইতিবাচক পরিবর্তনেও সাহায্য করে।”
‘হার্ভার্ড হেল্থ পাবলিশিং ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “আশাবাদের সাথে লক্ষ্য পূরণের সম্পর্ক রয়েছে। আশাবাদী মানুষরা সাধারণত মনে করে, সঠিক প্রস্তাব ও কার্যকরণের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান এবং অবস্থার উন্নতি করা যায়।”
মানসিকতা ভিন্ন
আশাবাদ কীভাবে স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে সেটা পরিষ্কারভাবে বোঝা না গেলেও, গবেষকরা এই অবস্থাকে ব্যবহারগত ও জৈবিক বৈশিষ্ট হিসেবে ধারণা করেন।
যেমন- নিরাশাবাদীদের তুলনায় আশাবাদীদের সাধারণত প্রদাহের মাত্রা কম হয় এবং উপকারী স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বশি থাকে। পাশাপাশি নানান ধরনের স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে লিপ্ত হয়, যেমন- ব্যায়াম করা, সঠিক খাবার খাওয়া, ধূমপান থেকে বিরত থাকা।
“আমরা এখনও জানি না এই ধরনের মানসিকতা কীভাবে স্বাস্থ্যের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে অথবা হতে পারে প্রাথমিকভাবে স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করতে উৎসাহ দেয়”- বলেন কুবজানস্কি।
আর এখান থেকেই প্রশ্ন জাগে সবাই কি আশাবাদী হতে পারেন?
প্রভাবকগুলো হল
কুবজানস্কি জানান, বংশগত কারণে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ আশাবাদী হয়। তারমানে হল আশাবাদী হওয়ার আরও প্রভাব আয়ত্তে আনার সুযোগ রয়েছে।
গবেষকরা দেখেছেন কিছু বিষয় মানুষের মধ্যে আশাবাদী হওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব রাখে। যেমন- আয় রোজগার, শিক্ষা, সামাজিক এবং ভৌগলিক অবস্থান।
“তাই পরিবেশ ও সামাজিক জীবন পরিবর্তন মানুষকে আশাবাদীদে রূপান্তর করার একটি পন্থা হতে পারে” – বলেন কুবজানস্কি।
তবে এই ধরনের পরিবর্তন ছাড়াও নিজেকে আশাবাদী করার আরও উপায় রয়েছে। বিষয়গুলো সহজ না হলেও মানসিকতা বদলাতে সাহায্য করে।
সুযোগের সন্ধান করা: যখন কঠিন সময় আসে তখন মনোযোগটা ইতিবাচক দিকে ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যেমন- কোনো সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে যদি অনেক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়, তবে সেই সময়টা ফোনে বন্ধু বা আত্মীয়ের খোঁজ খবর নেওয়ার কাজে লাগানো যায়। কিংবা পড়া যেতে পারে বই।
আবার কোনো দুর্ঘটনায় পড়ে যদি বাড়িতে বসে থাকতে হয় বা নিয়মিত জীবনযাপন ব্যহত হয় তবে সে সময়টা সাধারণ ‘স্ট্রেচিং’ করা বই পড়া বা নতুন কোনো বিষয় জানার ব্যাপারে খরচ করা যেতে পারে।
“এই ধরনের বিকল্প চিন্তাগুলো মনে ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করে আর স্মরণ করিয়ে দেয় কঠিন সময় সবসময় থাকে না। আর এই বাধা টপকে এগিয়ে যাওয়া যায়”- বলেন কুবজানস্কি।
শক্তির দিকে নজর দেওয়া: এক্ষেত্রে ‘ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া’র ‘গ্রেটার গুড সায়েন্স সেন্টার’য়ের একটি পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে।
যেমন- নিজের ভেতর কী কী শক্তি কাজ করে সেগুলোর প্রতি নজর দিন, যেমন- সৃজনশীলতা, অধ্যবসায়, দয়া, কৌতুহল। এরমধ্যে থেকে একটি বাছাই করে সেটা আজকে পালন করার চেষ্টা করতে হবে।
ধরা যাক- কোনো কিছু আগে শেখার ব্যাপারে কঠিন মনে হয়েছে। সেটা আজকে আবার চেষ্টা করে দেখতে হবে কীভাবে উত্তরণ ঘটানো যায়।
কৌতুহল বেছে নিলে, এমন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে যা আগে কখনও করেননি। আর সপ্তাহের প্রতিদিন বারবার এগুলো করার চেষ্টা করুন। এমন হতে পারে একেক দিন একেকটা বৈশিষ্ট নিয়ে কাজ করলেন।
এভাবে একসময় নিজের ভেতর থেকেই ইতিবাচক বিষয়গুলো উঠে আসতে শুরু করবে।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ: নিজে কী পাচ্ছে আর কী আছে সেসব নিয়ে আশাবাদীরার সবসময় কৃতজ্ঞ থাকে আর অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়। সেটা হতে পারে সুস্বাস্থ্য, যে কোনো খাবার খাওয়া নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা।
নিজের সম্পর্কে সেরা মনোভাব তৈরি করা: আগামী পাঁচ বা ১০ বছরের মধ্যে নিজেকে কোথায় দেখতে চান? এই পর্যালোচনার জন্য তিনটি প্রশ্ন সাহায্য করবে
এখন কী করছেন?
নিজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কী?
কোন বিষয়গুলো বিবেচ্য এবং কেনো?
উত্তরগুলো নতুন লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যেতে এবং নিজেকে উন্নত করার বিষয়ে নজর দিতে সাহায্য করবে। হয়ত কোনো বাধার কারণে আটকে ছিলেন, সেগুলো উত্তরণের পথ খুঁজে পাবেন।
“এই উত্তরগুলো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে আর ইতিবাচক ভবিষ্যত গড়ার ক্ষেত্রে নিজের ভেতর কর্মচাঞ্চল্য তৈরি করতে সাহায্য করে” বলেন কুবজানস্কি।