ফেসবুক—এটা এক এমন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ছবি, ভিডিও, মনের কথা, আনন্দ-বেদনা, উচ্ছ্বাস-অভিমান, সব কিছুই সহজেই শেয়ার করা যায়। এই সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের প্রতিদিনের অঙ্গীকার। তবে, এই প্ল্যাটফর্মের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ফিচার সম্প্রতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে, একে বলা হয়—রিলস। এক কথায়, এটি যেন ডিজিটাল যুগের নতুন মাদক! ছোট্ট, মজাদার, প্রায় নেশার মতো ভিডিওগুলো একটার পর একটা দেখতে দেখতে সময় যে কেমন করে উড়ে যায়, তাও টের পেতে সময় লাগে না।
এটি এমন একটি অভ্যাস, যা বিশেষভাবে যুবসমাজের মধ্যে প্রায় একধরনের আসক্তির মতো ব্যাপার হয়ে উঠেছে। এই ছোট ছোট ভিডিওগুলো দেখতে গিয়ে একসময় পুরো একটি ঘণ্টা চলে যায়, কিন্তু আপনি একটুও টের পান না। এটা কি সমস্যা? হ্যাঁ, তবে কিভাবে এটার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনবেন? সেই নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আপনার হাতেই। যদি আপনার ভিতর সত্যিকার ইচ্ছা থাকে, তবে আপনি সহজেই রিলস আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে পারেন—শুধু কিছু ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে। চলুন, এক ঝলকে দেখি কীভাবে সেই বদলে ফেলা সম্ভব!
প্রথমেই আসুন অ্যালার্ম সেট করার আইডিয়াটা নিয়ে!
আপনার ফোনে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের একটি অ্যালার্ম সেট করে দিন। শুধু ভাবুন, আপনি যখন একে একে রিলস দেখে যাচ্ছেন এবং সময়ের ধারাটি অতিক্রম করে ফেলেছেন, তখন হঠাৎ সেই অ্যালার্ম বাজবে। তখন মনে হবে, “আরে, এই তো! এখন তো কিছু একটা করতে হবে!” ওই মুহূর্তে রিলস দেখা বন্ধ করুন—এই অ্যালার্ম হবে আপনার সংবেদনশীলতার একটি সংকেত, যা আপনাকে পরবর্তী ভিডিও দেখতে যাওয়ার বদলে আপনার মনোযোগ অন্যদিকে ফেরাতে সাহায্য করবে।
আরেকটা উপায়, যে কথা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই—ফোন স্ক্রল করা থেকে বিরত থাকা!
আমরা যতই ব্যস্ত থাকি না কেন, কিছু সময় তো আসতেই পারে যখন ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রল করতে শুরু করি। কিন্তু একে একে স্ক্রল করতে করতে কখন যে আপনি রিলসের গভীরে ডুবে যাবেন, আপনি নিজেও জানবেন না! তাই চেষ্টা করুন, গুরুত্বপূর্ণ কাজের মাঝে ফোনে স্ক্রল করা থেকে বিরত থাকতে। আপনি যদি ফোন নিয়ে কাজ করছেন, তাহলে কি রিলস দেখে কাজ করতে পারবেন? নিশ্চয়ই না! তাই ফোনকে দূরে রাখুন, মনোযোগকে কাজে নিবেদিত করুন।
এবার, ফেসবুকের ওয়েব ভার্সন ব্যবহার করার কথাটি শুনুন।
হ্যাঁ, আপনি যদি ফেসবুকের ওয়েব ভার্সন ব্যবহার করেন, তাহলে রিলস দেখা তো দূর, এমনকি নিউজ ফিড বা স্টোরিতেও রিলস দেখার কোনো সুযোগ নেই! ভাবুন, আপনি মাউস বা কিবোর্ড দিয়ে কাজ করছেন, তখন রিলসের প্রলোভন আর মাথার ওপর ঝুলছে না! ফেসবুকের ওয়েব সংস্করণে গিয়ে আপনি বেঁচে যাবেন, রিলসের সাগরে ডুবে যাওয়ার বিপদ থেকে!
এখন, আরেকটি ছোট্ট কিন্তু কার্যকর উপায়—ফেসবুকের পুরনো ভার্সন ব্যবহার করা।
ফেসবুকের পুরনো ভার্সনে রিলস ফিচারটি একদমই নেই! হ্যাঁ, পুরনো ভার্সন ব্যবহার করে আপনি নিশ্চিতভাবেই রিলসের বিপদ থেকে দূরে থাকতে পারবেন। একে একে আপনি যখন সেই পুরনো ভার্সন চালাবেন, তখন দেখবেন, রিলস কোথাও নেই, আপনি মুক্ত!
এটি মনে রাখবেন: ফেসবুকের রিলস অ্যালগরিদম আপনার ওপর নজর রাখে!
ফেসবুক জানে, আপনি যত বেশি রিলস দেখবেন, তারা তত বেশি রিলস আপনাকে দেখাবে। এক ধরনের ডিজিটাল ফাঁদ, যেন আপনি আরও গভীরে ঢুকে পড়েন। কিন্তু কী হবে যদি আপনি একদিন সিদ্ধান্ত নেন, একদম আর রিলস দেখবেন না? দেখবেন, ফেসবুক আর আপনাকে কোনো রিলস দেখাবে না! মনে রাখবেন, সিদ্ধান্তই এখানে সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।
আরেকটি চমকপ্রদ পন্থা—গান শোনার জন্য ফোনের পরিবর্তে অন্য মিউজিক সিস্টেম ব্যবহার করা।
মিউজিক শুনতে শুনতে আপনি যদি রিলসেও ডুবে যান, তবে আরেকটা উপায় আছে। ফোনের হেডফোন ব্যবহার না করে, অন্য কোনো মিউজিক সিস্টেমে গান শুনুন—এতে ফোনের প্রতি আপনার আগ্রহ কমবে, পাশাপাশি রিলস দেখার প্রলোভনও শেষ হয়ে যাবে।
সবশেষে, যখন আপনি খেতে বসেন বা ঘুমাতে যান, তখন ফোনকে কিছুটা দূরে রাখুন।
এটি খুবই সহজ একটি উপায়, কিন্তু আমরা প্রায়ই ভুলে যাই। খাওয়ার সময়, বিশেষত রাতে ঘুমানোর আগে ফোনটি নিজের কাছে না রেখে কিছুটা দূরে রাখুন। ফোন ছাড়াই আপনি খেতে পারবেন, ঘুমাতে পারবেন, কিন্তু রিলসের নেশার শিকার হতে পারবেন না।
এতগুলো উপায় খেয়াল করে দেখুন, আপনি খুব সহজেই আপনার রিলস আসক্তি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন। একটু সতর্কতা এবং ইচ্ছাশক্তি থাকলেই আপনি নিজেকে সেই ডিজিটাল নেশা থেকে বের করে আনতে পারবেন। মনে রাখবেন, এই ছোট ছোট পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে আপনি জীবনটাকে এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারবেন—আর রিলস, হয়তো, আপনার দিনটিকে একেবারে চুরি করতে পারবে না!
সূত্র: ওয়ালহ্যাবিট