পৃথিবী যত সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ততই যেন মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হচ্ছে। সারা দিন অফিসের ডেস্কে বসে কাজ করা, বাসায় গিয়ে টিভি বা ল্যাপটপের সামনে বসে পড়া, পছন্দের ফাস্টফুড খাওয়া, ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম কম করা- সব মিলিয়ে হেলদি লাইফস্টাইল মেনটেইন করা সম্ভব হয় না। সেই সঙ্গে প্রতিদিনের কাজের চাপ আর নানা দুশ্চিন্তার কারণে স্ট্রেস হরমোন বাড়তে থাকে। আর স্ট্রেস হরমোন যত বাড়ে, সুগার ক্রেভিং বা শর্করার প্রতি আসক্তি তত বাড়ে।আর এসব কারণে বেড়ে যায় শরীরের ওজন। আর বাড়তি ওজন কমাতে শুরুতে সবাই অনেক কিছু ভাবলেও শেষ পর্যন্ত কিছুই করা হয় না। আজকের প্রতিবেদনে কিছু পানীয়র কথা বলব, যেগুলো সেবন করলে বাড়তি ওজন ঝরে যাবে নিমেষেই। চলুন, জেনে নেওয়া যাক সেসব পানীয় কী এবং কিভাবে তৈরি করবেন।
লেবু-আদার পানীয়
ওজন কমানো নিয়ে কথা বললে সবার আগে লেবুর নামটাই আসে। তবে অন্যান্য পানীয়ের সঙ্গে এটির পার্থক্য হচ্ছে, এতে লেবুর রস ও খোসা দুটোই ব্যবহার করা যাবে। ওজন কমাতে লেবু ও আদা কিভাবে হেল্প করে চলুন জেনে নিই-
বাড়তি ওজন কমাতে লেবু ও আদার উপকারিতা
লেবুর রসে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফোলেট ও পটাশিয়াম, যা হজমশক্তি বাড়ায়, ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে, ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা রোধ করে, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমায়, রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, আয়রন শরীরে শোষিত হতে সাহায্য করে। আর আদা আমাদের হজমে সাহায্য করে, বমিভাব প্রতিরোধ করে, প্রদাহের ঝুঁকি কমায়, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে, রক্তের শর্করা কমাতে সাহায্য করে, অ্যালঝেইমারের ঝুঁকি কমায়, রেসপিরেটরি ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
যেভাবে বানাবেন
একটি লেবু কেটে এর রসটুকু চিপে বের করে নিয়ে খোসাটাকে টুকরা টুকরা করে কেটে নিন। একই সঙ্গে এক ইঞ্চি পরিমাণ আদার খোসা ছাড়িয়ে সেটাকে একটু ছেঁচে নিন বা গ্রেটারে গ্রেট করে নিন। এখন চুলায় একটি পাত্রে এক লিটার পরিমাণ পানি নিয়ে তাতে টুকর করা লেবুর খোসা ও গ্রেট করা আদা দিয়ে দিন। সঙ্গে যোগ করুন কয়েকটি গোলমরিচ ও একটি দারচিনি (২ ইঞ্চি সাইজের)।
লেবুর খোসার টুকরগুলো নরম হয়ে আসা পর্যন্ত জ্বাল দিয়ে নামিয়ে ফেলুন।এবার গ্লাসে ঢেলে তাতে মিশিয়ে দিন মধু ও ফ্রেশ লেবুর রস। মধু যে শুধু হালকা মিষ্টি ভাব আনবে তাই না বরং এতে আছে হজমে সাহায্য করার জন্য বেশ কিছু উপাদান। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই পানীয়টি হতে পারে আপনার ওজন কমানোর জন্য আদর্শ।
জিরা-দারচিনির পানীয়
জিরাতে আছে কিউমিন্যালডিহাইড। এই উপাদানটি সুগন্ধ ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পরিপাক গ্রন্থিকে সুস্থভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। জিরাতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই আমাদের ত্বকে বলিরেখা পড়তে বাধা দেয়। এ ছাড়া জিরা কোষ্ঠিকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে এবং অ্যানিমিয়া রোধ করতে সাহায্য করে।
এই পানীয়র আরেকটি উপাদান দারচিনি। যা শুধু সুগন্ধই ছড়ায় তাই নয়, একে বলা হয় ‘পাওয়ারহাউস অব অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস’। এর গুণের জন্য হলেও প্রতিদিন একটু করে দারচিনি আমাদের সবারই খাওয়া উচিত। এ ছাড়া দারচিনি আরো কিছু কাজ করে থাকে-
যেভাবে পানীয়টি বানাবেন
একটি পাত্রে এক লিটার পরিমাণ পানি নিয়ে চুলায় ফুটিয়ে নিন। এবার তাতে ৩ চা চামচ জিরা ও ২টা (২ ইঞ্চির মতো) দারচিনি দিয়ে দিন। চুলায় পানি ৫-১০ মিনিটের মতো ফুটিয়ে পানি ছেঁকে গ্লাসে ঢেলে তাতে কিছুটা লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে নিন।
চিয়া-লেবুর পানীয়
চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা কিনা অনেক সময় পর্যন্ত পেট ভরা রাখে। এটি ক্ষুধার প্রবণতা কমায়, যার জন্য বারবার স্ন্যাকস খাওয়ার ইচ্ছে জাগে না। এ ছাড়া এটি প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় স্কিনের জন্যও খুব উপকারী।
যেভাবে পানীয়টি বানাবেন
প্রথমেই ২ চা চামচ চিয়া বীজ পানিতে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। চিয়া বীজ হালকা ফুলতে থাকলে চুলায় পানি বসিয়ে হালকা গরম করে নিন। এবার পানি ও চিয়া বীজ গ্লাসে ঢেলে তাতে মিশিয়ে নিন কিছুটা লেবুর রস ও মধু। ওজন কমাতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ওজন কমানোর জন্য এই পানীয়টি পান করতে পারেন।
সূত্র : সাজগোজ