বেশিরভাগ সময় ক্লান্ত বোধ করা বা কাজে উৎসাহ না পাওয়া অন্যতম কারণ দেহে শক্তি কাজ না করা।
শারীরিকভাবে যথেষ্ট উদ্যম কাজ না করলে প্রাকৃতিক পন্থায় কর্মশক্তি ফিরিয়ে আনা যায়।
আর সেসব পন্থার কথা হার্ভার্ড হেল্থ পাবলিশিং’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছে বস্টন’য়ের ‘ব্রিঘাম অ্যান্ড উইমেন’স হসপিটাল’য়ের চিকিৎসক হাওয়ার্ড লিওয়াইন।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
আবেগ অনুভূতি সংক্রান্ত চাপ শক্তি খরচ ফেলে। বন্ধু বা স্বজনদের সঙ্গে কথা বলা, ‘সাপোর্ট গ্রুপ’য়ে অন্তর্ভুক্ত হওয়া বা মনোবিজ্ঞানির সাহায্য নেওয়া মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
এছাড়া ধ্যান, ইয়োগা, প্রকৃতির মাঝে হাঁটতে যাওয়া- এই ধরনের বিষয়গুলো মানসিক চাপ কমাতে পারে।
কাজের চাপ হালকা করা
উদ্যম কমে যাওয়ার একটি কারণ অতিরিক্ত কাজ করা। পেশাজীবন, পারিবারিক এবং সামাজিক দায়- সব ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত কাজ করা কমাতে হবে। কোন বিষয়গুলো অবশ্যই করতে হবে সেগুলো তালিকায় আনতে হবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো প্রাধান্য দিতে হবে। আর কম জরুরি কাজগুলো রাখতে হবে কাজের নিচের তালিকায়। এছাড়া একহাতে সব কাজ না করে অন্যের সাহায্য নিতে হবে।
ব্যায়াম
শরীরচর্চা করলে ভালো ঘুমের নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। এছাড়া কোষের অক্সিজেন কার্যকরভাবে খরচ করার ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া ব্যায়াম মস্তিষ্কে ডোপামিন হরমোনের নিঃসরণ ঘটায় তা মনমেজাজ ভালো করতে ভূমিকা রাখে।
হাঁটার সময় একটু দ্রুত পদক্ষেপ নিলে বাড়তি স্বাস্থ্যোপকারিতা মিলবে।
ধূমপান এড়ানো
ধূমপান অনিদ্রার পরিমাণ বাড়িয়ে দেহের শক্তির মাত্রা কমিয়ে দেয়। টোবাকো’তে থাকা নিকোটিন উত্তেজক হিসেবে কাজ করে। ফলে হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়, রক্তচাপ বাড়ায় আর মস্তিষ্ক উদ্দীপ্ত করে। ফলে ঘুমাতে সমস্যা হয়। আর ঘুমিয়ে পড়ার পর নিকোটিনের আসক্তি কাজ করে। ফলে দ্রুত ঘুম ভেঙে যায়, নিকোটিন গ্রহণের ইচ্ছায়।
ঘুম কমানো
যদি মনে হয় ঘুম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তবে কম ঘুমানোর চেষ্টা করতে হবে। পরামর্শটা অদ্ভূত লাগতে পারে। তবে বিষয় হল- কী পরিমাণ ঘুম প্রয়োজন সেটা নির্ধারণ করতে পারলে, জেগে বিছানায় শুয়ে থাকার সময়টা কমিয়ে দেবে।
এই পদ্ধতিতে সহজে ঘুমিয়ে পড়া যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে শান্তির ঘুম হয়। এটা করার পন্থাগুলো হল
দিনে ঘুমানো বাদ দেওয়া
প্রথম রাতে, একটু দেরি করে বিছানায় যাওয়া এবং চার ঘণ্টার মতো ঘুমানো
যদি মনে হয় চার ঘণ্টার ঘুম যথেষ্ট হয়েছে তবে পরের রাতে আরও ১৫ থেকে ৩০ মিনিট অতিরিক্ত ঘুমাতে হবে।
যতক্ষণ বিছানায় গভীর ঘুম হবে ততবার ধীরে ধীরে অতিরিক্ত সময় যোগ করতে হবে। এভাবে কম ঘুমিয়ে প্রতিবার অতিরিক্ত সময় যোগ করে নিশ্চিত ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা যায়।
শক্তির জন্য খাওয়া
‘লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স’য়ের খাবার খেতে হবে। মানে হল, যেসব খাবারের শর্করা দেহে ধীরে শোষিত হয়, সেগুলো বেছে নিতে হবে। এসব খাবারের মধ্যে আছে- অপ্রক্রিয়াজাত পূর্ণ শষ্য, উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ সবজি, বাদাম এবং স্বাস্থ্যকর তে, যেমন: অলিভ অয়েল।
সাধারণভাবে উচ্চ কার্বোহাইড্রেইট সমৃদ্ধ খাবার অতিরিক্ত ‘গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স’য়ের মধ্যে পড়ে। প্রক্রিয়াজাত সরল শর্করা ধরনের খাবার দেহে দ্রুত চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয় ফলে ক্লান্তি বেশি কাজ করে।
এছাড়া প্রোটিন এবং চর্বি’র গ্লাইসেমিক ইনডেক্স প্রায় শূন্য।
ক্যাফিন থেকে উপকার নেওয়া
অবশ্যই চা কফিতে থাকা ক্যাফিন দেহের উদ্যম বাড়াতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। তবে শক্তি বৃদ্ধির এই উপাদান গ্রহণ করতে হবে বিচার বুদ্ধি খরচ করতে হবে। না হলে কাটাতে হতে পারে ঘুমহীন রাত। এজন্য দুপুর দুটার পর থেকে বেশি পরিমাণে চা-কফি পানের অভ্যাস ছাড়তে হবে।