গত সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছে। একই মামলায় তার মন্ত্রিসভার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকেও মৃত্যুদণ্ড এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এই রায় ঘোষণার পর থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ রায়টি ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই রায়ের দ্রুততায় এবং প্রক্রিয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে বিচার হওয়া উচিত ছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিরোধীদলের মধ্যে রাজনৈতিক বিভেদ আরও গভীর হবে এবং রাজনীতির মেরুকরণ বা পোলারাইজেশন বাড়বে। রায়ের বৈধতা ও প্রক্রিয়া যদি সুষ্ঠু না হয়, তাহলে তা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভাজনকে তীব্র করবে। একই সাথে, গত বছর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আনা সংশোধনী অনুযায়ী, মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলকৃত ব্যক্তিরা জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধ। এই রায়ের ফলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতার নির্বাচনী যোগ্যতা সংকুচিত হবে এবং দলের রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল হবে। আন্তর্জাতিক প্রভাবও বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে এই রায়কে কেন্দ্র করে ভারতের অবস্থান ও প্রতিবেশি দেশের রাজনৈতিক প্রভাব বিশেষ গুরুত্ব পাবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতের প্রতি রাজনৈতিক অবস্থান ও আন্তর্জাতিক চাপ শেখ হাসিনার রাজনীতির দিকনির্দেশনায় প্রভাব ফেলতে পারে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিরোধীদলের ওপর নির্যাতন ও গুমসহ নানা অভিযোগ থাকলেও, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার চলছে। এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, চিফ প্রসিকিউটর বারবার বলেছেন যে বিচারটি প্রতিহিংসামূলক নয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুমের মতে, এই রায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে গুঞ্জনের অবসান ঘটাবে। ভারতে বসে শেখ হাসিনার রাজনীতি পরিচালনার ক্ষেত্রও সীমিত হবে। পাশাপাশি, পশ্চিমা বিশ্ব ও ভারতের চাপও সীমিত হবে এবং শেখ হাসিনার দ্রুত দেশে ফেরার সম্ভাবনা কমে যাবে। সর্বোপরি, এই রায়ের ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের অবস্থান দুর্বল হবে এবং বিরোধী পক্ষ রাজনৈতিক ও নৈতিকভাবে শক্তিশালী হবে। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যত তথা স্থিতিশীলতা ও সংহতির ওপর এর প্রভাব এখন থেকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।