দেশজুড়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চলছে চরম প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা। দীর্ঘদিন পর ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে নির্বাচনের আয়োজন হলেও, রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা ও বিভাজন। অতীতের তিনটি নির্বাচনে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ না পেলেও সেসব নির্বাচনকে গণতান্ত্রিক আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ টানা শাসন চালিয়ে গেছে—যা শেষপর্যন্ত দুঃশাসনে রূপ নেয় বলে অনেকে মনে করেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণজাগরণে নির্বাচনের দাবি পুরণ হলেও, এবার ভোটের উৎসব ঘিরে দেখা দিয়েছে নতুন সংকট। গণভোট ও জুলাই সনদ ইস্যুতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। বিএনপির দাবির প্রেক্ষিতে সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট না করার পক্ষে তারা অনড়, অন্যদিকে জামায়াত নির্বাচনের আগেই গণভোটের জন্য চাপ দিচ্ছে। জামায়াতের পক্ষ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে এবং সময়সীমার মধ্যে আশ্বাস না মিললে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও এসেছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করছে। এমন উত্তেজনার মধ্যে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। যদিও সাত দিনের সময়সীমা প্রায় শেষের পথে, কিন্তু আপাতত কোনো সমঝোতার আভাস নেই। দীর্ঘ সময় ধরে চলা ঐকমত্য কমিশনের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়া ও রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানগত পার্থক্য জাতিকে হতাশ করেছে। প্রশ্ন উঠছে, এত আলোচনা ও পরিশ্রমের ফল কোথায়? বড় ধরনের ঐক্যমত্যের অভাবে সরকার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছে, তবে এতে দুই প্রধান পক্ষের সম্মতি নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। রাজনৈতিক সংকট নিরসনে কার্যকর সংলাপ ও সদিচ্ছা ছাড়া সমাধান অসম্ভব—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখন দেখার বিষয়, বিবদমান পক্ষগুলো বৃহত্তর স্বার্থে শেষ পর্যন্ত আলোচনার পথে আসে কিনা, নাকি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন আবারও অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে।