খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় সম্প্রতি এক ধর্ষণের ঘটনার জেরে পাহাড়ি-বাঙালি উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। কয়েক দিন ধরে টানা বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুরো এলাকা অশান্ত হয়ে উঠেছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হলেও সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ ও হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে। দুর্বৃত্তদের গুলিতে ইতিমধ্যে তিনজন নিহত এবং ১১ জন সেনা সদস্যসহ অনেকে আহত হয়েছেন; হামলা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপরও। পরিস্থিতি সামাল দিতে খাগড়াছড়ি ও গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগে ইউপিডিএফের দাবি করা সন্দেহভাজন শয়ন শীলকে ২৪ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয়। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চললেও, ইউপিডিএফের অঙ্গসংগঠন পিসিপি নেতার নেতৃত্বে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, হরতাল এবং অবরোধ কর্মসূচি চলছে। সড়ক অবরোধের মধ্যে গাড়ি ভাঙচুর, অ্যাম্বুলেন্সে হামলা, চোরাগোপ্তা পিকেটিংসহ নাশকতা অব্যাহত রয়েছে। পাহাড়ি-বাঙালি দাঙ্গার ঝুঁকি বাড়তে থাকায় প্রশাসন খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করে। তবে ১৪৪ ধারা অমান্য করে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপরও হামলার ঘটনা ঘটে। উল্লেখ্য, ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচজনের মধ্যে রয়েছেন হিন্দু, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায়ের সদস্যরা। সন্দেহভাজন শয়ন শীল ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হলেও, বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে। প্রশাসন জুম্ম ছাত্র-জনতা নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। তবুও, ঘটনার সূত্র ধরে দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহল পার্বত্যাঞ্চলে অশান্তি ছড়াতে তৎপর বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা জানান, ধর্ষণ ইস্যু ছাড়াও নানা কারণে প্রায়শই পাহাড়ি-বাঙালি উত্তেজনা দেখা দেয়, বাড়ে অবিশ্বাস। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, অপহরণ, জিম্মি করে অর্থ আদায়, ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা—এসব ঘটনায় পার্বত্যাঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই অশান্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশাসনের উচিত দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনা। পাশাপাশি, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং নিরীহ বাসিন্দাদের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনোভাবেই এ ধরনের ঘটনা বা উত্তেজনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা এবং পুরো পার্বত্যাঞ্চলকে অশান্ত করার অপচেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়। শান্তি ও সম্প্রীতির স্বার্থে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় জনগণের সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই।