মার্ক কার্নি, কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী, ইতোমধ্যে লিবারেল পার্টির নেতৃত্বে নির্বাচিত হয়েছেন। তার শপথ গ্রহণ হতে আর বেশি সময় বাকি নেই, এবং ইতোমধ্যে দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। গত রবিবার (৯ মার্চ), ক্ষমতাসীন দল লিবারেল পার্টি তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করেছে। নির্বাচিত হওয়ার পর, কার্নি তার প্রথম ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র যদি মুক্ত বাণিজ্যের প্রতিশ্রুতি না দেয়, তাহলে মার্কিন পণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক চালু রাখার জন্য তার সরকার প্রস্তুত।
একদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি তার কঠোর অবস্থানই ছিল ভাষণের মূল অঙ্গ। ট্রাম্পের শুল্কারোপ এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হিসেবে রূপান্তরের আহ্বানকে নিয়ে কার্নি মন্তব্য করেছেন, “আমরা কখনও এমন অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে নিজেদের সজ্জিত হতে দেব না।” এই ভাষণে কার্নি এমন এক দৃঢ় মনোভাব দেখিয়েছেন, যা কানাডিয়ানদের জাতীয়তাবোধকে জাগিয়ে তুলেছে। তিনি কানাডার শুল্ক বাড়িয়ে মার্কিন আমদানির ওপর চাপ অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন।
লিবারেল পার্টির নেতৃত্বে জয়লাভের পর, কার্নি তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী তিন প্রার্থীকে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত করেন। প্রথম ভোটেই ৮৫.৯ শতাংশ ভোট নিয়ে তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডকে হারান। এদিকে, এমন এক মুহূর্তে, যখন কানাডায় অভ্যন্তরীণ চাপ বৃদ্ধি পেয়ে ছিল, ট্রুডোর পদত্যাগ এবং কার্নির শপথ গ্রহণ দেশটির রাজনীতির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনে দিয়েছে।
জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের পর থেকে, কানাডীয়দের মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এক অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়। মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ে, এবং এই পরিস্থিতিতে কার্নির নির্বাচিত হওয়া অনেকটা পরিবর্তনের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। নির্বাচিত হওয়ার পরে, কার্নি সরকারের শুল্কবিরোধী প্রতিশোধমূলক সিদ্ধান্তের প্রতি তার সমর্থকদের উৎসাহ জানাতে দেখা যায়।
বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কানাডার সম্পর্ক অতীতেও তিক্ত ছিল। বিশেষ করে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পর কানাডা পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিলে, সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে, কার্নি তাঁর নির্বাচনী ভাষণে বলেন, “আমরা নিশ্চিত, আমাদের দেশে কোনো একাত্মতা আসবে না, যতক্ষণ না ট্রাম্প তাদের ভুল সংশোধন না করেন।” তার এই বক্তব্য কানাডীয় জনগণের মধ্যে গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, এবং তা দলের পক্ষে সমর্থন জুগিয়েছে।
অন্যদিকে, কনজারভেটিভ পার্টি তার সমালোচনা করে মন্তব্য করছে যে, কার্নি একই পথে হাঁটবেন, যেখানে লিবারেলরা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসার জন্য শুধু নেতা পরিবর্তন করবে, কিন্তু কার্যকরী পরিবর্তন হবে না। তবে, ফেডারেল জননিরাপত্তা মন্ত্রী ডেভিড ম্যাকগিন্টি কার্নির প্রতি তার সমর্থন জানিয়ে বলেন, “কার্নি একজন দৃঢ় সংকল্পের মানুষ, যিনি যেকোনো বড় সংকট মোকাবেলা করতে সক্ষম।”
এখন, সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক নতুন রাজনৈতিক লড়াই। কার্নির নেতৃত্বে লিবারেল পার্টি আগামী নির্বাচনে পিয়েরে পয়লিয়েভের কনজারভেটিভ পার্টির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, যেখানে কনজারভেটিভরা ১২০টি আসন নিয়ে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে রয়েছে। এটি একটি রাজনৈতিক দোলাচলের যুগ, যেখানে একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী দল নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে প্রস্তুত।
(ইত্তেফাক/এসআর)