গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের বেলুচিস্তান অঞ্চলে এক বিভীষিকাময় ঘটনা ঘটে। চার শতাধিক যাত্রী নিয়ে চলা একটি ট্রেনকে হামলার মুখে পড়তে হয়, এবং সশস্ত্র জঙ্গিরা ট্রেনটি ছিনতাই করে যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলে। ৩৬ ঘণ্টার দীর্ঘ অভিযানে, অবশেষে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী জিম্মিদের উদ্ধার করে। তবে, এই ভয়াবহ হামলার জন্য পাকিস্তান ভারত এবং আফগানিস্তানকে দায়ী করেছে, যা নিয়ে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার, ১৪ মার্চ, জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের এই দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে ভারত এবং আফগানিস্তান। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমনকি পাকিস্তানকে ‘আত্মসমালোচনা’ করার পরামর্শ দিয়েছে। আফগানিস্তানও তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছে, পাকিস্তানের অভিযোগ ভিত্তিহীন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, পাকিস্তানের দাবি সত্যের পক্ষে নয়। “সারা পৃথিবী জানে, সন্ত্রাসবাদের মূল আঁতুড়ঘর কোথায়,” তাদের বক্তব্য ছিল। তারা আরও বলেছে, অন্যদের দিকে আঙুল তোলার আগে পাকিস্তান যেন নিজেদের দিকে তাকায়। ডয়চে ভেলে আরও জানিয়েছে, সাধারণভাবে পাকিস্তান তাদের দেশের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের পেছনে ভারতকে দায়ী করলেও, জাফর এক্সপ্রেসের ঘটনায় আফগানিস্তানকেই প্রধান লক্ষ্যে পরিণত করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকত আলি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আফগানিস্তানেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল এই ট্রেন হাইজ্যাকের। তিনি বলেন, “আমাদের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে এই ধরনের হামলার জন্য সাধারণত ভারত দায়ী থাকে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে, আমাদের কাছে প্রমাণ আছে যে হামলার ছক আফগানিস্তানে তৈরি হয়েছে।” শাফকত আরও বলেন, “ভারত সারা দুনিয়ায় হত্যার প্রচার চালাচ্ছে, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য বিপদ ডেকে আনছে।” তিনি ভারতীয় মিডিয়ার বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (BLA) সম্পর্কে সদর্থক প্রচারেরও তীব্র সমালোচনা করেছেন। এদিকে, ভারত পাকিস্তানের এই বক্তব্যে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আফগানিস্তানের তালেবান শাসকরা জানিয়ে দিয়েছে, তাদের কোনও সম্পর্ক নেই পাকিস্তানের ট্রেনে হামলার সঙ্গে। আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল কাহার বালখি বলেন, “পাকিস্তান ভিত্তিহীন অভিযোগ করছে। আমরা এই অভিযোগ খারিজ করছি। পাকিস্তানকে বলছি, তারা যেন নিজেদের নিরাপত্তা এবং অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর দিকে মনোযোগ দেয় এবং এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে।” এভাবে, এই ঘটনার পেছনে কাদের হাত রয়েছে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র চাপানউতোর চলছে, এবং পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যে দাবি করা হয়েছে, তা বিশ্বে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।