ঈদ, বাংলাদেশের একটি বিশেষ উৎসব, যেখানে নতুন টাকা দেওয়ার ঐতিহ্য বহু বছর ধরেই চলে আসছে। প্রতিবছর ঈদকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে নতুন টাকা ছাড়ে, যা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের মধ্যে আনন্দ এবং উচ্ছ্বাস তৈরি করে। তবে আসন্ন ঈদে এই ঐতিহ্য পালিত হবে না—এবং এর ফলে কিছুটা হতাশাও সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে—কবে পাওয়া যাবে নতুন টাকা? এবং কি সেই টাকায় শেখ মুজিবের ছবি থাকবে? নাকি অন্য কোনো মহত্তম ব্যক্তির ছবি স্থান পাবে? এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, যিনি খালেদ মহিউদ্দিনের টক শোতে এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
নতুন টাকা বাজারে ছাড়ার দেরির পেছনে দায়ী করেছেন সেন্ট্রাল ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিলম্বকে। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “সেন্ট্রাল ব্যাংক অনেক কিছুই করতে পারতো। তারা নিজেদের বিচার অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। তবে আমরা সবকিছু বলতে পারি না। ডিজাইন পরিবর্তন করতে বলা, অথবা এমন একাধিক ছবি দেওয়া—এরকম কিছু কিছু প্রস্তাব আমি নিজেই দিয়েছিলাম। তবে, যেবার আমি গভর্নর ছিলাম, তখন টাকা ডিজাইনে কোনো ব্যক্তির ছবি রাখার প্রতি আমার কিছুটা আপত্তি ছিল। অনেকেই বলেছিলেন, ‘নজরুলের ছবি দিবেন না, রবীন্দ্রনাথের ছবি দিন’। আমি বলেছিলাম, ‘কায়কোবাদের ছবি দিলে কী সমস্যা?’ তখন আমি বলেছিলাম, ‘ব্যক্তির ছবি না দিয়ে ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন দাও, মসজিদ-মন্দিরের ছবি দেওয়া হোক।’ তখন কেউ কোনো প্রশ্ন তুলেনি।”
নতুন টাকার বাজারে আসার সময় সম্পর্কে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, “এখন বঙ্গবন্ধুর ছবি দেয়া হয়েছে, তবে এই বিষয়গুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে। ডিজাইন তো আসলে অনেক পরে দেয়া হয়েছে, আর আমরা তাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিয়েছি। কিন্তু এখন তারা বলছে, সময় লাগবে। প্রধান উপদেষ্টা এই ব্যাপারে বেশ উষ্মা প্রকাশ করেছেন, এবং আমাকে বলেছেন, ‘তোমাদের লোক কেন এত দেরি করছে?’ আমি বলেছি, ‘আমার লোক তো না, আসলে বাংলাদেশ ব্যাংকই এই সিদ্ধান্ত নেয়।’ বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, তারা এপ্রিল মাসের মধ্যে নতুন টাকা বাজারে ছাড়তে পারবে।”
তিনি আরও বলেন, “পুরনো টাকা তারা দেয়ার জন্য প্রস্তুত, তবে পুরনো টাকা বলতে ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট। নতুন নোটের মধ্যে এগুলো যুক্ত হবে কিনা, সেটা তারা এখনও জানায়নি। আমরা বলেছি, ‘না’। কারণ নতুন সরকার আসছে, তারা তখন বলবে, ‘যতটুকু দিচ্ছ, নতুন টাকা দাও।’ তবে জনগণের অনেকেই বলছেন, নতুন টাকা দিলে ভালো হতো। আমি বলেছি, ‘না, হয়তো কিছুটা ঘাটতি থাকুক, দরকার হলে মানুষ ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংক ট্রান্সফার ব্যবহার করবে।’ নতুন টাকার এত দরকার কি?”
ঈদে নতুন টাকা সালামি হিসেবে দেওয়া একটি ঐতিহ্য, যা কোনোভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে ঈদ তো হঠাৎ করে আসে না—তাহলে কেন আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি, এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “এটা আমি অস্বীকার করব না। যদি আরও আগে পরিকল্পনা করা যেত, যেমন আগস্ট বা সেপ্টেম্বর মাসে, তখন হয়তো জানুয়ারির মধ্যে নতুন টাকা পেতে পারতাম।”
শেষে তিনি বলেন, “এবার নতুন টাকার ডিজাইনে কোনো ব্যক্তির ছবি থাকবে না। ডিজাইনটি আমাদের কাছে ডিসেম্বরে এসেছিল, তারপর এক-দুই দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে বসে তা চূড়ান্ত করা হয়েছে।”