বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, যখন প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি একটি মন্তব্য করেছেন যে, শুধুমাত্র একটি দলই ডিসেম্বর মাসে নির্বাচনের দাবি করেছে। তাঁর এই বক্তব্যে দেশব্যাপী রাজনৈতিক মহলে বিস্ময় ও কঠোর সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, একজন নোবেল লরিয়েট বিদেশে গিয়ে এমন বক্তব্য কীভাবে দিয়েছেন, যা তাদের দাবি অনুযায়ী বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। প্রধান উপদেষ্টা যেভাবে বলেছেন যে, একমাত্র একটি দলই ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়, তা অনেকের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি, সহ বেশিরভাগ দল ডিসেম্বরে নির্বাচনের পক্ষে একমত। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৫০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৪৯টি দল ডিসেম্বরে নির্বাচনের পক্ষে, সেই সাথে শতাধিক অনিবন্ধিত দলও একই দাবি জানিয়েছে। তাদের মতে, দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন, যা দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে। এদিকে, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, তিনি বলেন, “আমি নিজে ৪০টিরও বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং তাদের সবাই ডিসেম্বরে নির্বাচনের পক্ষে। তবে প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্য কেন আসলো, তা আমি বুঝতে পারছি না।” একই বিষয় নিয়ে বিএনপির আরেক নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “গণতান্ত্রিক রাজনীতি করা এবং দেশের জনগণের প্রতি দায়িত্বশীলরা সবাই নির্বাচনের পক্ষে। যারা জনগণের কাছে যেতে পারেন না, তারাই নির্বাচন বিলম্বিত করতে চান।” এছাড়া, অন্যান্য দলের নেতারাও এ বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. অলি আহমদ বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্য বিভ্রান্তিকর। দেশের ৯০ শতাংশ দলই ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়।” গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা একেবারেই ভুল। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরে নির্বাচনের পক্ষে।” বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “সরকারের সমর্থক দুই-তিনটি দল ছাড়া সবাই ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়। নির্বাচন বিলম্বিত করার পেছনে সরকারের কোনও সুস্পষ্ট কারণ নেই।” বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলছেন, “সরকার যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে না, তা দেশের মানুষের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করছে।” এদিকে, বাংলাদেশের বিভিন্ন দলের নেতারা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছেন, “যত দ্রুত সম্ভব একটি নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করুক, দেশ দ্রুত স্থিতিশীল হবে।” এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থানরত প্রধান উপদেষ্টা, যিনি বিদেশে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন, তিনি যে উদ্দেশ্যে এই বক্তব্য দিয়েছেন, তা রাজনৈতিক মহলে এখনও অস্পষ্ট। তবে, রাজনৈতিক নেতারা মনে করছেন, একটি নির্বাচন ছাড়া দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না এবং সেটি আগামী ডিসেম্বরে হওয়া উচিত, না হলে দেশের জনগণ আরও বেশি হতাশ হবে।