আগামীকাল শুক্রবার সকালে লন্ডনের হোটেল ডোরচেস্টারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক সম্ভাবনাময় ও বহুল প্রতীক্ষিত বৈঠক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার এই রুদ্ধদ্বার বৈঠককে রাজনৈতিক মহলসহ সাধারণ মানুষের এক বিরাট অংশ ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়েছে। সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নির্ধারিত এ বৈঠকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে পুরো জাতি। বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যখন দেশের গণতান্ত্রিক ধারা প্রশ্নের মুখে, তখন এই বৈঠককে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে আশার নতুন আলো। অংশগ্রহণকারী দুই পক্ষই বিশ্বাস করছে, আলোচনার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে এটি হতে পারে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বিএনপির শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে নির্বাচনের সময়সূচি, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, জুলাই সনদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির মধ্যকার দূরত্ব অনেকটাই ঘুচতে পারে। সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের চেষ্টা করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এরপরই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে সরকারের পক্ষ। এতে বিএনপিও ইতিবাচক সাড়া দেয়। বৈঠকের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ইতোমধ্যে লন্ডনে পৌঁছেছেন। যদিও মূল বৈঠকটি হবে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের ‘ওয়ান টু ওয়ান’ আলোচনার ভিত্তিতে, তবুও বিএনপির একাধিক নেতা বৈঠকের প্রেক্ষাপট ও পরবর্তী পর্যায়ে তা বাস্তবায়নে যুক্ত থাকতে পারেন বলে জানা গেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বৈঠককে সময়ের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ইভেন্ট হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এই বৈঠকের মাধ্যমে নতুন একটি দিগন্তের সূচনা হতে পারে। আমরা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব দিয়েছি। আশা করছি, এ আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সহজ সমাধান বেরিয়ে আসবে।” বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “গোটা জাতি এখন লন্ডনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা বিশ্বাস করি, এটি হবে একটি ঐতিহাসিক বৈঠক এবং দেশের রাজনীতিতে সুবাতাস বইয়ে দেবে।” সবকিছু মিলিয়ে বলা যায়, লন্ডনের এই বৈঠক শুধু একটি আলোচনা সভা নয়, বরং এটি দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে চলেছে। এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে যদি রাজনৈতিক মতপার্থক্য দূর হয় এবং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের রূপরেখা চূড়ান্ত হয়, তবে তা হবে দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার জন্য এক নতুন দিগন্তের সূচনা।