রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এক কথায় তলানিতে নেমেছে। প্রতিদিনই ঘটছে রোমহর্ষক সব অপরাধের ঘটনা, যা গণমাধ্যমে নিয়মিতভাবে স্থান পাচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানীতে ঘটে যাওয়া একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় আমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, দেশে আদৌ কি জনগণের নিরাপত্তা দিতে পারছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী? বৃহস্পতিবার রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের রাসেল স্কয়ারে ঘটে যাওয়া ওই ছিনতাইয়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, পথচারীর ব্যাগ ছিনতাইয়ের পর উদ্যত চাপাতি হাতে ছিনতাইকারী পুলিশের সামনে দিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখেও নির্বিকার ছিলেন রাস্তায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের দুই সদস্য। প্রকাশ্যে ধারালো ও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ছিনতাইকারীদের হামলে পড়ার এমন দৃশ্য এখন হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে। ঢাকার বাইরেও চাঁদাবাজি, খুন, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নানা অভিযানের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু এতে আদৌ সুফল মিলছে কিনা, এ প্রশ্ন রয়েই গেছে। বরং অপরাধীরা ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে গতিও আসছে না। আমরা দেখছি, শুধু সন্ধ্যা বা রাত নয়, দিনদুপুরেও সাধারণ মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতে এখন বেপরোয়া ছিনতাইকারীদের অবাধ বিচরণ। সরকারের প্রেস উইংয়ের সরবরাহ করা অপরাধ পরিসংখ্যানও বলছে, গত ছয় মাসে দেশে খুনের ঘটনা ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অব্যাহত রয়েছে এবং নতুন করে শুরু হয়েছে ‘চিরুনি অভিযান’। এরপরও অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা আমাদের কাছে রহস্য বৈকি। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। কিন্তু বাস্তবতা যে এর উলটো, এ তথ্য কি তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে? আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, আতঙ্ক এতটাই যে, রাতে দূরে থাক, দিনেও মানুষ নিরাপদে চলাফেরা করতে ভয় পাচ্ছেন। প্রকাশ্যে ব্যস্ত রাস্তায় পুলিশের সামনে ছিনতাইকারীর চাপাতি মহড়ার দৃশ্য দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে যে বার্তা দিচ্ছে, তা ইতিবাচক নয়। জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশে সুশাসনের যে আকাঙ্ক্ষা জাতির হৃদয়ে জেগেছে, তা ফিকে হতে যে সময় লাগবে না, দায়িত্বশীলদের তা অনুধাবন করতে হবে। ইদানীং যেসব অপরাধের ঘটনা ঘটছে, তার মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ইন্ধন রয়েছে। অপরাধীরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে দেশে একটি নৈরাজ্য তৈরির চেষ্টা করছে। এগুলো কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। অনতিবিলম্বে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি দেখতে চাই আমরা। বিগত সরকার পতনের পর পুলিশের মনোবল নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছিল, এক বছর পর একই কথা নিশ্চয় জনগণ শুনতে চাইবে না। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে সরকার সর্বশক্তি প্রয়োগ করবে, এটাই প্রত্যাশা।