বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যমুনায় বিএনপির প্রতিনিধিদল! দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড: তদন্তে কোর কমিটি গঠন! কী আছে জুলাই সনদের অঙ্গীকারনামায়? এইচএসসি ফলাফলে বিস্মিত সবাই, শিক্ষার প্রকৃত সংকটে দায় এড়াতে পারে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়: শিক্ষা উপদেষ্টা মিরপুর অগ্নিকাণ্ড: শনাক্ত সাতজনের মরদেহ নিয়ে স্বজনদের দাবি এনসিপি প্রতীক বাছাই না করলে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি :কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তুরস্ক হয়ে দেশে ফিরছেন শহিদুল আলম শাপলা প্রতীক না পেলে নিবন্ধন নয়, নির্বাচন কমিশনকে হুঁশিয়ারি! ‘সেফ এক্সিট’ ইস্যুতে পরিষ্কার বক্তব্য চাইলেন উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক: গবাদিপশু ও মানুষের মধ্যে সংক্রমণ, সতর্কতা জরুরি!!

তৌহিদ আফ্রিদির গ্রেপ্তারে উন্মোচিত মুনিয়া হত্যার অন্ধকার অধ্যায়!!

bornomalanews
  • Update Time : বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫
  • ৬৭ Time View

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় এক সময়ের আলোচিত কলেজছাত্রী মোশারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর রহস্য যেন নতুন করে জাগরূক হয়েছে, যখন কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদির গ্রেপ্তারের পর তার জীবনের অন্ধকার দিকগুলো একে একে সামনে আসতে শুরু করেছে। ২০২১ সালে গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের পর থেকে এই ঘটনা আত্মহত্যা নাকি হত্যা—এই বিতর্কে ঘুরপাক খেয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ‘ক্রাইম এডিশন’ নামক একটি ভিডিও প্রতিবেদন এই রহস্যকে নতুন মোড় দিয়েছে, যেখানে আফ্রিদির সঙ্গে মুনিয়ার ঘনিষ্ঠতা এবং তার সম্ভাব্য ভূমিকা উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদনটি শুধু আফ্রিদির ব্যক্তিগত জীবনের প্রতারণা, নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেলের কাহিনীই নয়, বরং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার একটি জটিল জালও উন্মোচন করেছে, যা পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নতুন করে তদন্তে উদ্বুদ্ধ করেছে। তৌহিদ আফ্রিদি, যিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে পরিচিত, সম্প্রতি জুলাই গণআন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের এই মামলায় তিনি ১১ নম্বর আসামি, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান আসামি। তার বাবা নাসির উদ্দিন সাথী, যিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের চেয়ারম্যান, এই মামলায় ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে ছিলেন। কিন্তু আফ্রিদির গ্রেপ্তারের পর ‘ক্রাইম এডিশন’ প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যগুলো এই ঘটনাকে মুনিয়া হত্যার সঙ্গে যুক্ত করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আফ্রিদির সঙ্গে মুনিয়ার সম্পর্ক শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ ছিল না; সম্পর্কের অবনতি হলে তিনি নির্মমভাবে মুনিয়াকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই তথ্য প্রকাশ করেছেন আফ্রিদির প্রতারণা ও লালসার শিকার আরেক নারী, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। প্রতিবেদনে ফাঁস হওয়া একাধিক ফোনালাপ মুনিয়া এবং আফ্রিদির মধ্যকার ঘনিষ্ঠতাকে প্রমাণ করে। একটি কলে মুনিয়া এবং অন্য এক নারীর সঙ্গে আফ্রিদির কথোপকথন শোনা যায়, যেখানে ব্যক্তিগত এবং অন্তরঙ্গ বিষয় উঠে আসে। আরেকটি কলে আফ্রিদি মুনিয়াকে রাতে পিকআপ করার কথা বলেন, যা তাদের যাতায়াতের প্রমাণ দেয়। এমনকি একটি কলে আফ্রিদি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মুনিয়ার সঙ্গে দেখা করার কথা বলেন, যা তাদের সম্পর্কের গভীরতা তুলে ধরে। এই রেকর্ডগুলো বিশ্লেষণ করলে মুনিয়ার মৃত্যুর পিছনে আফ্রিদির সম্ভাব্য ভূমিকা স্পষ্ট হয়। ওই নারীর বক্তব্য অনুসারে, আফ্রিদি তাকে হুমকি দিয়েছিলেন যে, মুনিয়ার মতো তারও অবস্থা হবে—যা সরাসরি হত্যার হুমকি। এছাড়া, তাকে ডিবি অফিসে ডেকে গায়েব করে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়, যার ফলে তার সংসারের স্বপ্ন ভেঙে যায়। এই ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক ছায়া আরও গভীর। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে যে, আফ্রিদি এবং তার পরিবারের ঘনিষ্ঠতা ছিল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের সঙ্গে। আফ্রিদি হারুনকে ‘চাচা’ বলে ডাকতেন এবং এই তিনজনকে নিয়মিত নারী সরবরাহ করতেন বলে অভিযোগ। এই পৃষ্ঠপোষকতার আড়ালে আফ্রিদি তার অপরাধকর্ম চালিয়ে যেতেন, এবং মুনিয়া হত্যার তদন্তকে ভিন্ন খাতে নেওয়া হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের সময় আফ্রিদি জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের হুমকি দিয়ে সরকারের পক্ষে কাজ করানোর চেষ্টা করেছেন, এবং তার বিরুদ্ধে একাধিক নারীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগও উঠেছে। এখন পর্যন্ত আফ্রিদির বিরুদ্ধে দুটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় জুলাই আন্দোলনে আসাদুল হক বাবু নামে এক বিক্ষোভকারীর হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে তার জড়িত থাকার অভিযোগ। অন্যটি বাড্ডা থানায়, যেখানে ২০২৪ সালের ২০ জুলাই মধ্যবাড্ডা ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এই সব অভিযোগের আলোকে মুনিয়া হত্যার পুরোনো ফাইলগুলো নতুন করে খুলে দেখা হচ্ছে, যা ২০২১ সালে আত্মহত্যা হিসেবে চিহ্নিত হলেও ২০২৪ সালে হাইকোর্টে রি-ইনভেস্টিগেশনের আবেদন গৃহীত হয়েছে। এই ঘটনা শুধু একটি ব্যক্তির অপরাধের গল্প নয়, বরং ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক আশ্রয় এবং সামাজিক অবক্ষয়ের একটি দৃষ্টান্ত। মুনিয়ার মতো অনেক নারীর নীরব কান্না এখন সামনে আসছে, এবং আফ্রিদির গ্রেপ্তার যেন একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে—যেখানে অপরাধীরা আর আড়ালে থাকতে পারবে না। তদন্তের অগ্রগতি দেখার অপেক্ষায় রয়েছে দেশবাসী, যাতে ন্যায়বিচারের আলো সকল অন্ধকার ছিন্ন করে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2025 bornomalanews24.com
themesba-lates1749691102