প্রবাস জীবন শেষে আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে প্রত্যাবর্তন করতে যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বাংলাদেশের বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই ফেরা কেবল একটি দলের শীর্ষ নেতার ঘরে ফেরা নয়, বরং একটি সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ঘটনার সূচনা। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত বাস্তবতায় তারেক রহমানের সামনে বিরাট সম্ভাবনার পাশাপাশি জটিল চ্যালেঞ্জও অপেক্ষা করছে। দেশে ফেরার খবর পাওয়া মাত্রই তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে। দীর্ঘদিন তথ্যপ্রযুক্তির পর্দা পেছনে থেকে তাকে সরাসরি সামনে পেয়ে বিএনপির নির্বাচনি প্রচারণায় গতি আসবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। তরুণ ভোটারদের মাঝে তার নেতৃত্বের উদ্দীপনা বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারে। তবে দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা, মনোনয়ন সংক্রান্ত কোন্দল দমন এবং সিন্ডিকেট সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করাই তার প্রথম বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া বহিঃশক্তির ষড়যন্ত্র, ডিজিটাল অপপ্রচার ও দেশের আইনশৃঙ্খলার নাজুক অবস্থা মোকাবিলায় কৌশলগত সচেতনতা প্রয়োজন। তারেকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও জরুরি বিষয়। জাতীয় ঐক্যের ফাটল মেরামত করে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলা তার সামনে আরেকটি বড় পরীক্ষা। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে নির্বাচনের পর। যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, ধ্বংসপ্রায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের কাজ সহজ হবে না। শাসনব্যবস্থা, বিচার ও প্রশাসন পুনর্বাসন, মব ভায়োলেন্স নিয়ন্ত্রণ, দুর্নীতি নির্মূল ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাই হবে তার নেতৃত্বের সার্থকতার মাপকাঠি। তারেক রহমান ইতোমধ্যে ‘৩১ দফা’ রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা উপস্থাপন করেছেন, যা বাস্তবায়ন করাই এখন সময়ের দাবি। দেশের মানুষ শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন নয়, গুণগত রাজনৈতিক পরিবর্তন প্রত্যাশা করে। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আধুনিক, জবাবদিহি ও সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার ওপর তারেকের নেতৃত্ব নির্ভর করবে দেশের ভবিষ্যত। তিনি একজন দলের নেতা হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকবেন নাকি রাষ্ট্রনায়ক হয়ে দেশকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উত্তোলন করবেন— তা নির্ভর করবে তার ধৈর্য, দূরদর্শিতা ও সংকল্পের ওপর। কঠিন পথ পাড়ি দিতে হলে বৃহত্তর ঐক্যের গুরুত্ব তার ও দলের জন্য অপরিহার্য।