প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে আইনের শাসনের একটি স্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ক্ষমতার অবস্থান যাই হোক না কেন, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়—এটাই দেশের আদালতের দণ্ডাদেশের মূল বার্তা। ড. ইউনূস আরও বলেন, এই রায় শুধু একটি বিচারিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি দেশের ভেতর থেকে বৈশ্বিক পর্যায় পর্যন্ত একটি প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করেছে। যদিও এটি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মানুষের প্রতি সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার প্রদান করতে পারেনি, তবুও এটি ন্যায়বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। তিনি দেশের দীর্ঘ দিনের দমন ও নিপীড়নে ক্ষতিগ্রস্ত গণতান্ত্রিক ভিত্তি পুনর্গঠনের সংকটকালীন সময়ে দাঁড়িয়ে থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগ শুধু আইনের লঙ্ঘন নয়, রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যে মৌলিক আস্থা ভাঙার ঘটনাও ছিল। এই ঘটনা দেশের মৌলিক মূল্যবোধ, মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারকে তীব্রভাবে আঘাত করেছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, আদালতে দীর্ঘ সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর হেলিকপ্টার থেকেও গুলি চালানো হয়েছিল। এই রায় তাদের দুর্ভোগকে স্বীকৃতি দেয় এবং ন্যায়বিচারের প্রতি দেশের দায়িত্বশীলতাকে পুনর্ব্যক্ত করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক জবাবদিহিতার মূল স্রোতে পুনরায় যুক্ত হচ্ছে। যারা পরিবর্তনের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছে, তাদের ত্যাগ আমাদের সামনে নতুন পথ নির্মাণ করছে। শুধু আইনি দায়বদ্ধতা নয়, রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনও এখন অত্যন্ত জরুরি। ড. ইউনূস আশা প্রকাশ করেন যে, এই রায় দেশের ন্যায়বিচারের যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে এবং বাংলাদেশ সাহস ও বিনয়ের সঙ্গে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। আইনের শাসন, মানবাধিকার ও ব্যক্তিগত সম্ভাবনার প্রতি অঙ্গীকারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার শুধু টিকে থাকবে না, বরং বিজয়ী ও স্থায়ী হবে। এর আগে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দুটি দণ্ডাদেশ প্রদান করে; একে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্যকে আজীবন কারাদণ্ড। একই সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।