চব্বিশের জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কোনো সাবেক সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধে প্রথম রায়। মামলার দুই নম্বর অভিযোগে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড এবং এক নম্বর অভিযোগে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। শেখ হাসিনা ড্রোন, হেলিকপ্টার এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি পালন করেছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি সেই নির্দেশ পালন করেছেন। বিচারকাজে ট্রাইব্যুনাল জুরিসডিকশন, আসামিপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং রোম স্ট্যাটিউট অনুযায়ী সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির ভিত্তি বিশ্লেষণ করেন। রায়টি মোট ৪৫৩ পৃষ্ঠার বিশদ একটি দলিল। ট্রাইব্যুনাল ঢাকার বিভিন্ন স্থানে প্রাণঘাতী অস্ত্র ও হেলিকপ্টার থেকে গুলির ভিডিও এবং তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করে। এছাড়া আন্দোলন দমন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টও আদালতে পাঠানো হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলির ঘটনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও সাবেক মেয়রসহ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে শেখ হাসিনার টেলিফোন কথোপকথন তুলে ধরা হয়। এর আগে, ২৩ অক্টোবর প্রসিকিউশন ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হলে ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করা হয়। আর সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ রায় ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমে এই রায় সরাসরি সম্প্রচার করা হয়, যা দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে গণ্য হচ্ছে।