ভারতের ব্যাংকিং খাতে অনুৎপাদক সম্পদ বা খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ ২ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসার তথ্য জানিয়েছে। গত ১২ বছরের মধ্যে এটিই সর্বনিম্ন।
আরবিআইয়ের ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত আর্থিক স্থিতিশীলতা রিপোর্টে জানানো হয়েছে, নিট ঋণ ও অগ্রিমের বিপরীতে নিট এনপির পরিমাণ শূন্য দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি, ঋণগ্রহণকারীদের ঋণ পরিশোধের প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ঋণ অবলোপন নিয়ে উদ্বেগ
যদিও আরবিআই বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ঋণ অবলোপনের হার বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ২০২৩ সালের মার্চে ভারতের ব্যাংকগুলোর অনুৎপাদক সম্পদের হার ছিল ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তা কমে ২ দশমিক ৪ শতাংশে নেমেছে।
বৃহৎ ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে অনুৎপাদক সম্পদের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। প্রথম ১০০ জন বৃহৎ ঋণগ্রহীতার খেলাপি ঋণ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। তবে মধ্যম সারির গ্রাহকদের ঋণগ্রহণের প্রবণতা বেড়েছে।
ব্যাংকগুলোর মুনাফায় উল্লম্ফন
২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর পরবর্তী মুনাফা ৩০ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মুনাফা বেড়েছে ২০ দশমিক ২ শতাংশ এবং বিদেশি ব্যাংকগুলো মুনাফা করেছে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের খেলাপি ঋণ সর্বোচ্চ
ভারতের ব্যাংক খাত যেমন শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে, বাংলাদেশের চিত্র ঠিক উল্টো। চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ, যা মোট ঋণের ১৭ শতাংশ। অন্যদিকে, ভারতের খেলাপি ঋণ ৩ শতাংশের নিচে রয়েছে, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো।
ভারতের আর্থিক স্থিতিশীলতা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও দৃষ্টান্ত
আরবিআই জানিয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধীরগতির মধ্যেও ভারতের অর্থনীতি ও আর্থিক খাত শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। ২০১০ সালে ভারতের খেলাপি ঋণ ছিল ১০ শতাংশ। ধারাবাহিকভাবে এটি কমতে কমতে এখন ২ দশমিক ৬ শতাংশে পৌঁছেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ঋণ পরিশোধের সংস্কৃতি বৃদ্ধি, সুশাসন ও আর্থিক খাতে সঠিক তদারকি ভারতের ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছে। এটি বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও ভারতের অর্থনীতিকে শক্তিশালী অবস্থানে রাখতে ভূমিকা রাখছে।