উন্নত চিকিৎসার আশায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে পৌঁছেছেন। স্থানীয় সময় আজ বুধবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটে তাঁর বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
পরিবার ও দলের সান্নিধ্যে এক আবেগঘন মুহূর্ত
বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তাঁর বড় ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান। ২০১৭ সালের পর এই প্রথমবার মা-ছেলের সরাসরি দেখা হলো। তাদের এই পুনর্মিলন যেনো এক মানবিক গল্পের অংশ, যেখানে রাজনীতির আবহও প্রবলভাবে জড়িয়ে আছে।
এছাড়াও, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে খালেদা জিয়ার প্রতি তাদের আনুগত্যের প্রকাশ ঘটান।
বিমানবন্দর থেকে হাসপাতালে সরাসরি যাত্রা
ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষে খালেদা জিয়া রয়্যাল ভিভিআইপি গেট দিয়ে বের হন। তাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স সরাসরি ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। সেখানে তার চিকিৎসা শুরু হবে। পরে, চিকিৎসার আরও উন্নত ধাপের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে অবস্থিত জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হতে পারে।
শারীরিক পরিস্থিতি: জীবন-মৃত্যুর সীমানায় দাঁড়িয়ে
দীর্ঘদিন ধরেই খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, কিডনি সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। এর মধ্যে কয়েকবার তিনি সংকটময় অবস্থায় পড়েন। তাঁর চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, লিভার প্রতিস্থাপন এখন সময়ের চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, পুরো প্রক্রিয়ায় দুই মাসের মতো সময় লেগে যাবে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং পেছনের কাহিনী
খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার পথটা সহজ ছিল না। ২০১৮ সালে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর তিনি কারাবন্দী হন। শারীরিক অবস্থার অবনতির সঙ্গে সঙ্গে পরিবার এবং দল একাধিকবার তাঁর বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করে। কিন্তু সেসব আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়।
পরবর্তীতে, ২০২৩ সালে জনস হপকিনসের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ঢাকায় তাঁর শরীরে রক্তনালিতে সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। তবে, লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া তাঁর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা: ধর্ম, দল এবং প্রত্যাবর্তন
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসা শেষে খালেদা জিয়া আবার লন্ডন ফিরে আসবেন। সেখান থেকে সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন করবেন এবং তারপর দেশে ফিরবেন।খালেদা জিয়ার এই যাত্রা শুধুমাত্র চিকিৎসার নয়, এটি তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যেখানে ব্যক্তিগত সংকট, রাজনৈতিক ইতিহাস, এবং দলীয় আশা একত্রে মিশে আছে। সময়ই বলে দেবে, এই চিকিৎসা তাঁর জীবনে কতটা নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে।