ভিরাট কোহলির ফর্ম নিয়ে অনেক দিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে প্রচুর। দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট হাতে খুব বাজে সিরিজ কাটানোর পর তা পেয়েছে নতুন মাত্রা। তার আউট হওয়ার ধরন নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অস্ট্রেলিয়া সফরে তিনি কেমন করবেন, অনেকের মনে জাগছে সংশয়। তবে রাভি শাস্ত্রির বিশ্বাস, দুঃসময়ের চক্র থেকে বেরিয়ে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে ভালো করবেন কোহলি।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এই তারকার উজ্জ্বল পরিসংখ্যানই আশাবাদী করে তুলছে ভারতের সাবেক অলরাউন্ডার ও সাবেক প্রধান কোচকে।
গত জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ম্যাচ জয়ী ৭৬ রানের ইনিংসের পর সব সংস্করণ মিলিয়ে ১৩ ইনিংসে আর পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি কোহলি। ঘরের মাঠে বাংলাদেশ ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ মিলিয়ে পাঁচ টেস্টে তার ব্যাটিং গড় স্রেফ ২১.৩৩। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশড হওয়া সিরিজে ৬ ইনিংস মিলিয়ে করতে পারেন কেবল ৯৩ রান।
পুনে টেস্টে বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের ফুল টস মিস করে বোল্ড হন তিনি। তার মানের ব্যাটসম্যানের থেকে যা প্রত্যাশিত নয়। টেস্টে সবশেষ ১২ ইনিংসে তার ফিফটি কেবল একটি। প্রায় ১০ বছর পর টেস্ট ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে সেরা বিশের বাইরে চলে গেছেন তিনি। নিজের সেরা সময়কে যে তিনি পেছনে ফেলে এসেছেন, তা ফুটে উঠছে এসব পরিসংখ্যানেই।
তবে আইসিসি রিভিউয়ে শাস্ত্রি বললেন, অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ টেস্টের সিরিজে ৩৬ বছর বয়সী কোহলি ছন্দে ফিরবেন বলে মনে হচ্ছে তার।
“রাজা তার রাজ্যে ফিরে এসেছে। তাদের (সংশয়বাদীদের) শুধু এটুকুই বলব আমি। অস্ট্রেলিয়ায় নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে যখন কেউ এই তকমা অর্জন করে, এরপর যখন সে ব্যাট করতে নামবে, তখন বিষয়টা তাদের (প্রতিপক্ষের) মাথায় থাকবে।”
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এখন পর্যন্ত ১৩ টেস্টে ৫৪.০৮ গড়ে কোহলি করেছেন ১ হাজার ৩৫২ রান। ৪টি ফিফটির সঙ্গে সেঞ্চুরি আছে ৬টি। ভারত ছাড়া দুটির বেশি সেঞ্চুরি আছে তার কেবল অস্ট্রেলিয়াতেই।
নিজের প্রথম সফরে ২০১১-১২ মৌসুমে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনিই। অ্যাডিলেইডে শেষ ম্যাচে লড়িয়ে সেঞ্চুরিসহ ৪ টেস্টে করেছিলেন সিরিজের তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩০০ রান।
অস্ট্রেলিয়ায় পরের সফরে ২০১৪-১৫ মৌসুমে তো রীতিমতো রানের বন্যা বইয়ে দেন তিনি। ৪ টেস্টে ৮৬.৫০ গড়ে করেন ৬৯২ রান। ওই সফরেই কোহলির টেস্ট অধিনায়কত্বের অভিষেক হয় অ্যাডিলেইডে প্রথম ম্যাচে। উপলক্ষটা তিনি রাঙান ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি করে। অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করা চার ক্রিকেটারের একজন তিনি।
২০১৮-১৯ মৌসুমে তার নেতৃত্বেই ৭১ বছরের অপেক্ষা ঘুচিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পায় ভারত। সেবার তিনি সেঞ্চুরি করেন পার্থ টেস্টে।
২০২০-২১ মৌসুমে পরের সফরেও অস্ট্রেলিয়ায় সিরিজ জেতে ভারত। যদিও সেবার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকার জন্য প্রথম টেস্টের পর ফিরে এসেছিলেন ওই সময়ের অধিনায়ক কোহলি।
অস্ট্রেলিয়ায় সীমিত ওভারের দুই সংস্করণেও কোহলির পরিসংখ্যান বেশ দারুণ। ওয়ানডেতে ২৯ ইনিংসে ৫১.০৩ গড়ে রান ১ হাজার ৩২৭। ৬ ফিফটির সঙ্গে সেঞ্চুরি আছে ৫টি। টি-টোয়েন্টিতে ১৬ ইনিংসে ৯ ফিফটিতে ৭৪৭ রান ৭৪.৭০ গড়ে।
এবার অস্ট্রেলিয়ায় ভালো করার জন্য কোহলিকে একটি পরামর্শও দিলেন শাস্ত্রি।
“আমি মনে করি, ব্যাট হাতে প্রথম আধ ঘণ্টা বা সিরিজের প্রথম তিন ইনিংসে শান্ত থাকা তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। যদি সে শান্ত হতে পারে এবং তাড়াহুড়ো না করে নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারে, তাহলে আমি মনে করি সে ভালো করবে।”
অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে বৃহস্পতিবার প্রথম অনুশীলন করেছে ভারত দল। আগামী ২২ নভেম্বর পার্থ টেস্ট দিয়ে শুরু হবে সিরিজ।