ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার পার্থ টেস্টের প্রথম দিন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে লোকেশ রাহুলের আউট। তৃতীয় আম্পায়ারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ধারাভাষ্যকার থেকে শুরু করে সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকে। যথাযথ প্রযুক্তির সরবরাহ না থাকারও দায় দেখছেন কেউ কেউ।
অপ্টাস স্টেডিয়ামে শুক্রবার ভারতের ইনিংসের ২৩তম ওভারের ঘটনা এটি। পেসার মিচেল স্টার্কের বলে রাহুলের কট বিহাইন্ডের আবেদন করে অস্ট্রেলিয়া। মাঠের আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবরো আউট দেননি। অস্ট্রেলিয়া নেয় রিভিউ। আল্ট্রা এজ-এ ব্যাটের পাশ দিয়ে বল যাওয়ার সময় স্পাইক দেখা যায়। রাহুল ইঙ্গিত করছিলেন, প্যাডে লেগেছে ব্যাট। দুটি অ্যাঙ্গেল থেকে রিপ্লে দেখে আউট দেন তৃতীয় আম্পায়ার রিচার্ড ইলিংওয়ার্থ।
অসন্তুষ্ট হয়ে মাঠ ছাড়েন ৭৪ বলে ২৬ রান করা রাহুল। ভারতের স্কোর হয়ে যায় তখন ৪ উইকেটে ৪৭।
বল রাহুলের ব্যাটে লেগেছে নাকি ব্যাট লেগেছে প্যাডে, তা নিয়ে সংশয়ের জায়গা ছিল যথেষ্ট। এই সিরিজের ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হয়নি তৃতীয় আম্পায়ারের।
“পর্যালোচনা করার জন্য যখন অনেকগুলো অ্যাঙ্গেল থাকে, তখন সিদ্ধান্ত নিতে তাড়াহুড়ো করা ঠিক নয়। বিশেষ করে, যদি আপনি মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত উল্টে দেন।”
তৃতীয় আম্পায়ারকে দোষ না দিলেও, মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বদলে দেওয়ার মতো যথেষ্ট নিশ্চিত প্রমাণ ছিল কি-না, এই প্রশ্ন স্টার স্পোর্টসে আলাপে তোলেন ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান ও ধারাভাষ্যকার সাঞ্জায় মাঞ্জরেকার। যথাযথ প্রযুক্তি তৃতীয় আম্পায়ারকে সরবরাহ করা হয়নি বলেও মনে করেন তিনি।
“প্রথমত, টিভি আম্পায়ারকে যা সরবরাহ করা হয়েছিল তাতে আমি হতাশ। তার আরও প্রমাণ পাওয়া উচিত ছিল। মাত্র কয়েকটি অ্যাঙ্গেলের ওপর ভিত্তি করে, ম্যাচে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল বলে আমি মনে করি না। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে, খালি চোখে শুধুমাত্র একটি বিষয় নিশ্চিত যে, ব্যাট লেগেছে প্যাডে। খালি চোখে এটিই শুধু নিশ্চিত হওয়া গেছে। অন্য সবকিছুর জন্য প্রযুক্তির সাহায্য প্রয়োজন, আর তা হলো স্নিকো।”
“তাই বল যদি ব্যাটে লেগে থাকে, তাহলে আগে স্পাইক হওয়া উচিত ছিল, কারণ সেখানে স্পষ্টত দুটি ঘটনা ঘটেছে এবং আম্পায়ার স্পষ্টতই একটি শব্দ শুনেছেন। দৃশ্যত একটা বিষয়ই নিশ্চিত ছিল, সেটা হলো ব্যাট লেগেছে প্যাডে। আর এটিই যদি ওই স্পাইক হয়, তাহলে ব্যাটে বল লাগেনি। যদি আমরা দুটি স্পাইক দেখতাম, তাহলে বলতে পারতেন, প্রথমটি ব্যাটে লেগেছিল। টিভি আম্পায়ারের কাছে প্রযুক্তির দুর্বল সরবরাহ ছিল। তাই তার বলা উচিত ছিল, নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।”
আরেক সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান আকাশ চোপড়া সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা করেছেন তৃতীয় আম্পায়ারের।
“মাঠের আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নট আউট। সিদ্ধান্তটি উল্টে দেওয়ার জন্য অকাট্য প্রমাণ কি ছিল? ব্যাট নিশ্চিতভাবে প্যাডে লেগেছে…দৃশ্যমানভাবে নিশ্চিত…তাহলে আল্ট্রা-এজ-এ দুটি স্পাইক থাকল না কেন? বক্স থেকে হাস্যকর আম্পায়ারিং।”
সাবেক আম্পায়ার সাইমন টাফেলের মতে, বল রাহুলের ব্যাটে লেগেছে এবং এরপর ব্যাট লেগেছে প্যাডে, আর এতেই তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি।
“আম্পায়ার অকাট্য প্রমাণ খুঁজেছেন। রিভিউয়ের শুরুতে (প্রযুক্তির) কিছু ত্রুটি ছিল, তিনি কিছু ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল পাননি, যা তিনি চেয়েছিলেন। রিচার্ড ইলিংওয়ার্থের (তৃতীয় আম্পায়ার) জন্য কাজটা কঠিন ছিল, কিন্তু এই ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলটি সম্ভবত আমার জন্য সেরা, এতে দেখাচ্ছে যে বল ব্যাটের কানায় লেগেছিল। আমার দৃষ্টিতে বল ব্যাটের কানায় লেগেছিল, এর কারণে স্পাইক দেখা যায়, কিন্তু এরপর ব্যাট লাগে প্যাডে।”
“তাই আমি মনে করি, ব্যাটারদের দৃষ্টিকোণ থেকে, সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তারা বড় পর্দায় সেই প্রমাণ দেখতে চেয়েছে। আমার মনে হয় ঠিক এ কারণেই কেএল রাহুলের মনে প্রশ্নবোধক চিহ্ন রয়েছে, রিচার্ড কেটেলবরোরও (মাঠের আম্পায়ার) তাই।”